আরবে প্রেরিত নবী-রাসুল ছিলেন মোট পাঁচজন। তাঁরা হলেন—ইসমাইল (আ.), হুদ (আ.), সালিহ (আ.), শোয়াইব (আ.) ও সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)।

আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি জিজ্ঞাসা করলাম—হে আল্লাহর রাসুল! নবীদের সংখ্যা কত? তিনি উত্তরে বললেন, “এক লাখ চব্বিশ হাজার (১,২৪,০০০)।” আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম—তাঁদের মধ্যে রাসুল কতজন? তিনি বললেন, “তিনশ তেরোজন (৩১৩), যারা একটি বড় দল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন।”

রাসুল (সা.) বলেন, চারজন সুরয়ানি : আদম (আ.), শিস (আ.), নুহ (আ.) ও ইদরিস (আ.)। ইদরিস (আ.) প্রথম কলম দিয়ে লেখেন। তাঁদের চারজন আরব : হুদ (আ.), সালিহ (আ.), শোয়াইব (আ.) ও তোমার নবী (সা.)। বনি ইসরাঈলের প্রথম নবী মুসা (আ.) এবং তাদের শেষ নবী ঈসা (আ.)।

প্রথম নবী (আ.) এবং শেষ নবী তোমার নবী (সা.)। (আদ-দুররুল মানসুর : ৫/১৩২)

এর বাইরে ইসমাইল (আ.)-ও আরবের নবী ছিলেন। কেননা তাঁর মাধ্যমে আরবদের ‘মুস্তারিবা’ (নবাগত) ধারার উৎপত্তি হয়েছিল। এ জন্য তাঁকে আরব জাতির পিতাও বলা হয়।

আরবে প্রেরিত পাঁচ নবী-রাসুলের পরিচয়

আরব জাতির প্রতি প্রেরিত পাঁচ সম্মানিত নবী-রাসুলের পরিচয় তুলে ধরা হলো—

১. হুদ (আ.) : আল্লাহ নবী হুদ (আ.)-কে আদ জাতির প্রতি প্রেরণ করেন। তারা ছিল ‘আরবে বাদিয়া’ (প্রাচীন আরব গোত্র, যাদের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না) ধারা অন্তর্ভুক্ত। আদ জাতি আহকাফ নামক স্থানে বসবাস করত, যা ইয়েমেন, আম্মান ও হাদারামাউতের মাঝে অবস্থিত। আদ জাতি আল্লাহর শাস্তিতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পবিত্র কোরআনে হুদ (আ.) ও তাঁর গোত্রের বর্ণনা একাধিকবার এসেছে।

যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘আদ সম্প্রদায় রাসুলগণকে অস্বীকার করেছিল। যখন তাদের ভাই তাদেরকে বলল, ‘তোমরা কি সাবধান হবে না? আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রাসুল। অতএব আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।’ (সুরা : আশ-শুআরা, আয়াত : ১২৩-১২৭)

২. সালিহ (আ.) : নবী সালিহ (আ.) সামুদ জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। সামুদ গোত্রও আরবে বাদিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারা আধুনিক সৌদি আরবের হিজর নামক স্থানে বসবাস করত। হিজর হিজাজ ও তাবুকের মধ্যে অবস্থিত। সামুদ জাতিও আল্লাহর শাস্তিতে ধ্বংস হয়েছিল। কোরআনের একাধিক সুরায় সামুদ জাতি ও সালিহ (আ.)-এর বর্ণনা এসেছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, সামুদ সম্প্রদায় রাসুলগণকে অস্বীকার করেছিল। যখন তাদের ভাই সালিহ তাদেরকে বলল, ‘তোমরা কি সাবধান হবে না? আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসুল। অতএব আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। আমি তোমাদের কাছে এর জন্য কোনো প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার জগত্গুলোর প্রতিপালকের কাছেই আছে।’ (সুরা : আশ-শুআরা, আয়াত : ১৪১-১৪৫)

৩. শোয়াইব (আ.) : আল্লাহ তাআলা শোয়াইব (আ.) মাদায়েনের অধিবাসীদের জন্য প্রেরণ করেছিলেন, তারা ছিল আরব। মাদায়েন হলো হিজাজের নিকটবর্তী শামের উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ। যা আধুনিক সৌদি আরবে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এবং জর্দানের দক্ষিণে অবস্থিত ছিল। আল্লাহর প্রতি ঈমানের আহবান প্রত্যাখ্যান এবং ওজনে কম দেওয়ার কারণে তাদের ধ্বংস করা হয়েছিল। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি মাদায়েনবাসীর কাছে তাদের ভাই শোয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য উপাস্য নেই। তোমাদের প্রতিপালক থেকে তোমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ এসেছে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৮৫)

৪. ইসমাইল (আ.) : নবী ইসমাইল (আ.) পবিত্র মক্কা নগরীতে বেড়ে ওঠেন। মক্কা, হিজাজ ও ইয়েমেনের জন্য প্রেরিত হন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো এই কিতাবে ইসমাইলের কথা, সে ছিল প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং সে ছিল রাসুল ও নবী। সে তাঁর পরিবারকে নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ দিত এবং সে ছিল তাঁর প্রতিপালকের সন্তোষভাজন।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৫৪-৫৫)

৫. মুহাম্মদ (সা.) : শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন ইসমাইল (আ.)-এর বংশধর। তিনি ছিলেন শেষ নবী এবং তিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ নবুয়তের ধারাকে পূর্ণতা দান করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪০)

মহান আল্লাহ সব নবী-রাসুলের প্রতি শান্তি বর্ষণ করুন। আমিন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version