রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা প্রায় ৬টা ৩৫ মিনিটে নয়াদিল্লিতে পৌঁছান। পালাম বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সফরের প্রথম দিনেই প্রধানমন্ত্রী পুতিনের সম্মানে একান্ত নৈশভোজের আয়োজন করেছেন। এটি গত বছরের জুলাইয়ে মস্কো সফরে পুতিনের দেওয়া আতিথেয়তার পাল্টা সৌজন্য হিসেবে দেখানো হচ্ছে।

পুতিনের এই ভারত সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বিদ্যমান। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের দৃশ্যমান অবনতি, মস্কোর ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নতুন নিষেধাজ্ঞা, ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা বৃদ্ধি এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের জ্বালানি সম্পর্ক নিয়ে ক্রমবর্ধমান চাপ—সব মিলিয়ে সফরটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার। তার আগে রাষ্ট্রপতি ভবনে পুতিনকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানানো হবে। এরপর ঐতিহ্যবাহী হায়দরাবাদ হাউসে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সকালে রুশ প্রেসিডেন্ট রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরে তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকের একটি নতুন ভারত-ভিত্তিক চ্যানেল উদ্বোধন করবেন। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তার সম্মানে রাষ্ট্রীয় ভোজের আয়োজন করবেন। সফর শেষে পুতিন শুক্রবার রাত প্রায় ৯টার দিকে ভারত ত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে।

সরকারি সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানায়, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে একটি বড় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলও ভারতে এসেছে। এই সফরের মাধ্যমে ভারতের অন্যতম পুরোনো কৌশলগত অংশীদার রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর আশা করছে ভারত। এবারের শীর্ষ বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় হবে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও বাণিজ্য। শিপিং, স্বাস্থ্যসেবা, সার উৎপাদন ও যোগাযোগ খাতে একাধিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

শীর্ষ বৈঠকের আগের দিন বৃহস্পতিবার দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। আলোচনায় ভারতের জন্য অতিরিক্ত এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিলম্বিত সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, রাশিয়া ভারতের কাছে সু-৫৭ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান সরবরাহের প্রস্তাব তুলতে পারে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে রাশিয়াকে রাফাল, এফ-২১, এফ/এ-১৮ ও ইউরোফাইটার টাইফুনের মতো পশ্চিমা যুদ্ধবিমানের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় নামতে হবে।

ভারত এখনো রাশিয়ার সস্তা জ্বালানি তেলের অন্যতম বড় ক্রেতা। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার দুটি বড় তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় ভারতের রুশ তেল আমদানিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। পুতিনের সফর এমন সময় হচ্ছে, যখন ভারত–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে দেশের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা গত দুই দশকের সবচেয়ে টানটান সময় বলে মনে করছেন।

এদিকে পুতিনের সফরকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় দিল্লি ও নয়াদিল্লি জেলার বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে ৫ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রয়েছে সোয়াট টিম, সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড, উঁচু স্থানে মোতায়েন স্নাইপার, কুইক রিঅ্যাকশন টিম, অ্যান্টি-ড্রোন ব্যবস্থা, হাই-ডেফিনিশন সিসিটিভি নেটওয়ার্ক এবং প্রযুক্তিনির্ভর বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version