পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ২৯ জন। এই হামলাটি ঘটেছে শনিবার দুপুরে।

উত্তর ওয়াজিরিস্তানের একজন সরকারি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, সেনাবাহিনীর একটি গাড়িবহরের মধ্যে বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ি ঢুকে পড়ে এবং ঢোকার কিছুক্ষণ পরই শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ১৩ জন সেনা সদস্য প্রাণ হারান এবং ২৯ জন আহত হন। নিহতদের সবাই সেনাবাহিনীর সদস্য।

তিনি আরও জানান, আহতদের মধ্যে ১০ জন সামরিক সদস্য এবং বাকি ১০ জন বেসামরিক ব্যক্তি। বিস্ফোরণের অভিঘাতে কাছাকাছি দুটি বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়ে, এতে আরও ৬ জন শিশু আহত হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহত দশজন সেনাসদস্যের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এদিকে, পাকিস্তানভিত্তিক তালেবান সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর উপশাখা ‘হাফিজ গুল বাহাদুর আর্মড গ্রুপ’ এ হামলার দায় স্বীকার করে একটি বিবৃতি দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের চারটি প্রদেশ ও তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তান—এই দুটি প্রদেশে গত কয়েক বছরে সন্ত্রাসী হামলা ও তৎপরতায় ব্যাপক বৃদ্ধি দেখা গেছে। খাইবার পাখতুনখোয়া দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানপন্থি তালেবান গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে, বেলুচিস্তানে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) পাকিস্তান থেকে প্রদেশটিকে আলাদা করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। দুটি গোষ্ঠীরই চূড়ান্ত উদ্দেশ্য—খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানকে পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করা।

২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে ২০২৪ সাল ছিল সর্বাধিক ভয়াবহ; ওই বছর দেশে মোট ৪৪টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এ সংখ্যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা আগের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি।

এসব হামলায় প্রাণ হারান ৬৮৫ জন সেনা সদস্য এবং ৯২৭ জন বেসামরিক নাগরিক। তবে পাল্টা অভিযানে সেনা ও পুলিশের যৌথ অভিযানে নিহত হয়েছে ৯৩৪ জন সন্ত্রাসী।

সূত্র: এএফপি

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version