ভারী বৃষ্টিপাত আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ১৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার সীমান্তবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিতে তলিয়ে গেছে বহু সড়ক, ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা।

বুধবার (৯ জুলাই) সকাল থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও, প্লাবিত এলাকার জলাবদ্ধতা এখনও কাটেনি। তবে শহরের কিছু অংশে পানি নামতে শুরু করায় খানিকটা স্বস্তিতে রয়েছে শহরবাসী।

বাঁধ ভাঙনের ভয়াবহ চিত্র

পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী,

  • মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙেছে:
    • পরশুরামে জঙ্গলঘোনায় ২টি, অলকায় ৩টি, শালধরে ১টি
    • ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুরে ১টি
  • সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙেছে:
    • পরশুরামের গদানগরে ১টি
    • ফুলগাজীর দেড়পড়ায় ২টি
  • কহুয়া নদীর বাঁধ ভেঙেছে:
    • পরশুরামের সাতকুচিয়ায় ২টি, বেড়াবাড়িয়ায় ১টি
    • ফুলগাজীর দৌলতপুরে ১টি

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেল থেকে এসব এলাকায় ভাঙনের ঘটনা শুরু হয়। প্রশাসন জানিয়েছে, বুধবার রাত পর্যন্ত নতুন করে আর কোনো ভাঙন দেখা যায়নি।

মানুষের দুর্ভোগ ও অভিযোগ

ফুলগাজীর নিলক্ষ্মী এলাকার বাসিন্দা মাসুদুর রহমান বলেন,

“বৃষ্টি কমলেও পানি ঢুকছে বাঁধের ফাঁটল দিয়ে। আগের বছরের মতো এবারও মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা হচ্ছে। কোনো প্রস্তুতি নেই প্রশাসনের।”

পরশুরামের তুলাতলী এলাকার আরিফ হোসেন জানান,

“গতকাল সন্ধ্যা থেকে চারদিকে পানি। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে, যানবাহন বন্ধ। এখনো কোনো ত্রাণ আসেনি।”

শহরের একাডেমি এলাকার তোফায়েল নিলয় বলেন,

“ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি নামছে না। বৃষ্টি একটু হলেই শহর ডুবে যায়। খাল দখলমুক্ত না করলে সমস্যার সমাধান হবে না।”

প্রশাসনের বক্তব্য ও আবহাওয়া পূর্বাভাস

পরশুরামের ইউএনও আরিফুর রহমান বলেন,

“বাঁধে নতুন করে কোনো ভাঙন হয়নি। আমরা দুর্গতদের পাশে আছি।”

ফেনী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী,
গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামীকালও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার জানান,

“১১টি স্থানে ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। উজানে বৃষ্টি বন্ধ থাকলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।”

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version