২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি— তখনও ঘুম ভাঙেনি দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের শহরগুলো। ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে আচমকা কেঁপে উঠে মাটি, মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় শত শত ভবন। প্রাণ হারায় ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ। অথচ, এমন ভয়াবহ বিপর্যয়ের আগে গুগল চাইলেই সতর্ক করতে পারতো ১ কোটির বেশি মানুষকে। কিন্তু পারেনি।
সম্প্রতি বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, ওই ভূমিকম্পের সময় গুগলের অ্যান্ড্রয়েড আর্থকুয়াক অ্যালার্টস সিস্টেম কার্যত ব্যর্থ হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রযুক্তি ভূমিকম্পের কম্পন শনাক্ত করে আগাম সতর্কতা পাঠানোর কথা। গুগলের ভাষ্য অনুযায়ী, ৭.৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ‘টেক অ্যাকশন’ সতর্কবার্তা পেয়েছিল মাত্র ৪৬৯ জন। অথচ, সময়মতো এই বার্তা পৌঁছালে মানুষ হাতে পেতো অন্তত ৩৫ সেকেন্ড, যা জীবনের জন্য হতে পারতো অনেক বড় সুযোগ।
প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ছিল মূল কারণ। গুগলের অ্যালগরিদম তখন কম্পনের মাত্রা ভুলভাবে ৪.৫ থেকে ৪.৯ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। ফলে অনেক ফোনে ‘টেক অ্যাকশন’ অ্যালার্মই বাজেনি। অনেকেই বলেন, তারা ভূমিকম্প হওয়ার আগেই কোনো সতর্কবার্তা পাননি।
গুগল জানায়, এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা অ্যালগরিদমে পরিবর্তন এনেছে। নতুন সংস্করণে এখন ১ কোটি মানুষকে ‘টেক অ্যাকশন’ এবং আরও ৬ কোটি ৭০ লাখ মানুষকে ‘বি অ্যাওয়ার’ বার্তা পাঠানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে। বর্তমানে প্রযুক্তিটি ৯৮টি দেশে ব্যবহার হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র গুগলের ওপর নির্ভর করা বিপজ্জনক হতে পারে। কলোরাডো স্কুল অব মাইনসের অধ্যাপক এলিজাবেথ রেড্ডি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “মানুষ মারা গেছে, অথচ গুগল নিজেদের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করতে সময় নিয়েছে দুই বছর!”
প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট সিসমিক নেটওয়ার্কের পরিচালক হ্যারল্ড টোবিন সতর্ক করে বলেন, “গুগল যদি সতর্ক করে, আমরা নিশ্চিন্ত— এমন চিন্তা ভুল। নিজেদের প্রস্তুতি থাকা জরুরি।”
বিবিসি জানতে চেয়েছে, ২০২৫ সালের মিয়ানমার ভূমিকম্পে গুগলের সিস্টেম কেমন কাজ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত গুগল কোনো উত্তর দেয়নি।