প্রবল আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে গাজায় অবশেষে ত্রাণ বর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েল। শনিবার রাতে গাজার কিছু এলাকায় আকাশপথে খাবারের বস্তা ছুড়ে ফেলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে সেই ত্রাণই হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন বিপদের কারণ। বস্তার আঘাতে কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
শনিবার ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (IDF) জানায়, গাজায় সাতটি বস্তায় ময়দা, চিনি ও ক্যানজাত খাবার ফেলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে একটি ট্রাকেও যতটা খাবার বহন করা যায়, তার চেয়েও কম এই সরবরাহ—এমনটাই বলছেন পর্যবেক্ষকরা।
রবিবার থেকে গাজায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ‘সামরিক বিরতি’ চালু করার ঘোষণাও এসেছে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছে, আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ এবং গাজা শহরে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হামলা বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কিছু রাস্তা ত্রাণসেবার জন্য খোলা থাকবে। তবে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্পষ্ট করেছে—সামরিক অভিযান পুরোপুরি বন্ধ হবে না।
আইডিএফ আরও জানায়, গাজার একমাত্র জল বিশুদ্ধিকরণ প্ল্যান্টে রোববার থেকে আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হবে। উল্লেখ্য, মার্চ মাস থেকেই সেখানে বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল।
অন্যদিকে, বেইট লাহিয়া অঞ্চলে ছোড়া একটি ত্রাণের বস্তা সরাসরি শরণার্থী তাবুর ওপর পড়ে, যাতে আহত হন ১১ জন। সংবাদমাধ্যমের দাবি, সাতটি বস্তা ফেলা হলেও সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছেছে মাত্র পাঁচটি। বাকি দু’টি inaccessible এলাকায় গিয়ে পড়ে।
ত্রাণ সহায়তাকারী সংস্থাগুলো এই ত্রাণবর্ষণকে “অপর্যাপ্ত” এবং “প্রহসন” বলে অভিহিত করেছে। তাদের অভিযোগ, গাজায় ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হচ্ছে। শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে, অনেকের মৃত্যু হয়েছে খাদ্যের অভাবে।
ইসরায়েলের এক সেনা কর্মকর্তা খাদ্য নিরাপত্তার ঘাটতি স্বীকার করলেও, ‘দুর্ভিক্ষ চলছে’ এমন দাবি অস্বীকার করেছেন।
বিশ্বজুড়ে নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা চলছে। তার যুক্তি—জাতিসংঘের পাঠানো ত্রাণসামগ্রী হামাসের হাতেই পৌঁছায়, তাই তা আটকে রাখা হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই “ত্রাণ বর্ষণ” ক্ষুধার্ত জনতার জন্য ‘বিন্দু জল’ মাত্র।