গাজায় ত্রাণ পেতে প্রতিদিন চলছে এক মরনপণ লড়াই। খাবারের জন্য ১১ মিনিটের লাইনে দৌড়। এক চিমটে খাবার জোগাড় করতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন শত শত মানুষ। আর গত ৭২ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২১ জন শিশুর।
একদিকে ইসরায়েলি সেনার লাগাতার গোলাবর্ষণ, অন্যদিকে ভয়াবহ খাদ্যসংকট। ত্রাণশিবিরে পৌঁছাতে হয় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে। কিন্তু সেই শিবিরও যেন একেকটা ‘মৃত্যুফাঁদ’। কখন গুলি এসে বিঁধবে শরীরে, কেউ জানে না। গাজার আল-শিফা মেডিক্যাল সেন্টারের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু সালমিয়া জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে অনাহার ও অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি হয়ে উঠছে “অত্যন্ত উদ্বেগজনক”।
দক্ষিণ গাজায় আল-মাওয়াসির শিবিরের বাসিন্দা আয়েদ জামালের ভিডিওতে উঠে এসেছে সেই বিভীষিকার চিত্র—“ট্যাঙ্ক থেকে আচমকা গুলিবর্ষণ শুরু হয়। আমার পাশের তিনজন গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল। আমার ভাগ্যে শুধু দু’টি খালি খাবারের বাক্স।”
গাজায় চালু রয়েছে চারটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র—তাল আল-সুলতান, সৌদিপাড়া, ওয়াদি গাজা ও খান ইউনিস। কিন্তু এসব এলাকায় ইসরায়েলি সেনা আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে শরণার্থী শিবির থেকে আসা সাধারণ মানুষদের পাড়ি দিতে হয় কয়েক কিলোমিটার। অথচ এসব ত্রাণকেন্দ্র দিনে একবার মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য খোলা হয়। সৌদিপাড়ার কেন্দ্রটি জুন মাসে গড়ে খোলা ছিল মাত্র ১১ মিনিট।
এই সংক্ষিপ্ত সময়ে খাবার পেতে পড়ে হুড়োহুড়ি, পদপিষ্টের ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। একেকটি খাবারের বাক্স যেন জীবন-মৃত্যুর প্রতীক। সেই দৌড়ে পিছিয়ে পড়লেই ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে কিংবা গুলিবিদ্ধ হয়ে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসাব অনুযায়ী, মে মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ ও পণ্য সরবরাহ বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। বিশ্বের চাপের মুখে কিছু ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজা পরিস্থিতিকে বর্ণনা করেছেন “সম্পূর্ণ ধ্বংস ও মৃত্যুর স্তরে পৌঁছানো এক মানবিক বিপর্যয়” হিসেবে। এ সংকট এখন আর কেবল রাজনৈতিক নয়—এটি হয়ে উঠেছে এক মহামারির মতো মানবিক দুর্যোগ।