বিশ্বের অনেক দেশ এখন গ্রামীণ জনশূন্যতা, কম জন্মহার এবং তরুণদের শহর বা বিদেশে চলে যাওয়ার প্রবণতা মোকাবিলায় নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপের কিছু দেশ পরিত্যক্ত গ্রামীণ, পাহাড়ি ও উপকূলীয় এলাকায় নতুন বাসিন্দাদের আকৃষ্ট করতে নগদ অর্থ, বাসস্থান সংস্কার প্রণোদনা এবং সহজ ভিসা সুবিধা দিচ্ছে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো ঐ অঞ্চলের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং স্থানীয় অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করা।
আয়ারল্যান্ড:
আয়ারল্যান্ডের ছোট ও বিচ্ছিন্ন প্রায় ৩০টি দ্বীপে জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় ‘Our Living Islands’ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এতে পুরোনো বা পরিত্যক্ত বাড়ি সংস্কারের জন্য এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৮৪,০০০ ইউরো পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাবে। নতুন বাসিন্দারা ডিজিটাল হাব, দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও জনসেবার সুবিধাও পাবেন। বিদেশি নাগরিকরাও আবেদন করতে পারবেন, তবে আয়ারল্যান্ডের ভিসা ও বসবাসের নিয়ম মেনে চলতে হবে।
সুইজারল্যান্ড:
সুইজারল্যান্ডের ভালাইস অঞ্চলের পাহাড়ি গ্রাম আলবিনেনে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে নতুন বাসিন্দাদের জন্য ২৫,০০০ সুইস ফ্রাঁ পর্যন্ত আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। প্রতি শিশুর জন্য অতিরিক্ত অনুদানও রয়েছে। তবে আবেদনের জন্য কমপক্ষে ১০ বছর সেখানে বসবাসের প্রতিশ্রুতি দিতে হয় এবং বাড়ি কেনা বা নির্মাণের মানদণ্ড পূরণ করতে হয়।
ইতালি:
ইতালির সার্ডিনিয়া ও অন্যান্য ছোট শহরে জনশূন্যতা কমাতে ‘১ ইউরো হোম’ প্রকল্প চালু রয়েছে, যেখানে পুরোনো বাড়ি খুব কম দামে বিক্রি হয়। পাশাপাশি বাড়ি কেনা ও সংস্কারের জন্য সর্বোচ্চ ১৫,০০০ ইউরো পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হয়। উদ্যোক্তাদের জন্য কর ছাড় এবং দীর্ঘমেয়াদী ভিসা সুবিধাও পাওয়া যায়, যাতে তারা গ্রামীণ এলাকায় ব্যবসা শুরু করতে উৎসাহিত হন।
স্পেন:
স্পেনের এক্সট্রিমাদুরা অঞ্চলে নতুন বাসিন্দাদের জন্য ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ ইউরো পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। বিশেষত ৩০ বছরের নিচের তরুণরা অতিরিক্ত ৫,০০০ ইউরো পাবেন। এই অঞ্চলে ডিজিটাল নোম্যাড ও রিমোট কর্মীদের জন্য বিশেষ সুযোগ রয়েছে, যেখানে দুই বছর বসবাসের শর্ত পূরণ করলে সহায়তা পাওয়া যায়।
এই উদ্যোগগুলো কেবল বসবাসের প্রণোদনা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে গ্রামীণ অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। যারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, নতুন অভিজ্ঞতা বা রিমোট কাজের সুযোগ চান, তাদের জন্য এসব দেশ এখন আকর্ষণের কেন্দ্রস্থল।

