নতুন বাংলাদেশে টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজির রাজনীতি চলবে না বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভিপি মো. আবু সাদিক (কায়েম)। আজ রবিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের অডিটরিয়ামে তারুণ্যের উৎসব অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য তিনি।

তারুণ্যের উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান। এ ছাড়াও ঢাবির প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা; প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের যুগ্মসচিব, পরিচালক (সিড ফাইন্যান্সিং) প্রিয়সিন্ধু তালুকদার, ম্যানেজমেন্ট এফবিএস ক্লাব লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজাউল বিল্লাহ। অনুষ্ঠানটির আহ্বায়ক ছিলেন ঢাবি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।

সাদিক কায়েম বলেন, স্মরণ করছি জুলাই শহীদ ও আজাদী আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আজকে আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী আমরা বারবার বলছি তরুণদের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই এবং জুলাই বিপ্লবে আমরা দেখতে পেয়েছি তরুণরাই এ বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশের তরুণদের এক বিন্দুতে মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ আমলে আমরা দেখেছি খুনি হাসিনা এদেশের তরুণদেরকে পলিটিক্যাল করে রাখার চেষ্টা করেছিল এবং আই হ্যাড পলিটিক্স এই টাইপের একটি জেনারেশন বিল্ড করার চেষ্টা করেছে। তরুণদেরকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা, তাদেরকে রাজনৈতিক অসচেতন হিসেবে তাদেরকে রাখার সব ধরনের প্রচেষ্টা করেছে। কিন্তু ‍খুনি হাসিনা সব চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছিল এই ২৪-এর জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে।

এই জুলাই বিপ্লবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে তারা এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছিল। তারা এই জালেম হাসিনার বিরুদ্ধে এক বিন্দুতে মিলিত হয়ে এবং আমাদের শহীদদের মাধ্যমে আজকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করেছে। এই নতুন বাংলাদেশে যদি আমরা নেতৃত্ব দিতে চাই, নতুন বাংলাদেশকে যদি আমরা শহীদের আকাঙ্ক্ষার আলোকে বিনির্মাণ করতে চাই, তাহলে তরুণদেরকে আমাদের তৈরি করতে হবে।

সাদিক কায়েম বলেন, তরুণদেরকে সারা বিশ্বে নেতৃত্ব দেয়ার তাদের উপযোগী হিসেবে তাদেরকে তৈরি করতে হবে। বিশ্বের বড় বড় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, হারবার, এমআইডি ওই বিশ্ববিদ্যালয় তরুণরা যেভাবে নিজেদেরকে প্রস্তুত করে ন্যাশনাল বিল্ডিং-এর জন্য সেভাবে আমাদেরকে প্রস্তুত হতে হবে।

আমি মনে করি তারুণ্যের যে উৎসব আজকে শুরু হচ্ছে, এই উৎসবের আমেজ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে ইনশাল্লাহ। একই সাথে আজকে আমাদের তরুণরা সবাই এক জায়গায় একমত হয়েছে যে, বাংলাদেশে আর মাসল পলিসি চলবে না, চাঁদাবজি-টেন্ডারবাজির রাজনীতি চলবে না। গণরুম-গেস্টরুমের কালচার চলবে না। জোরপূর্বক কাউকে প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া। কারো অধিকার হরণ করা সেই রাজনীতি এখন চলবে না।

আরও পড়ুন : ছাত্রসংগঠনগুলোকে শিবিরের নতুন ধারার রাজনীতি অনুসরণের আহ্বান সাদিক কায়েমের

তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশের রাজনীতি হবে আইডিয়াল রাজনীতি। ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের আইডিয়াগুলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের আইডিয়া নিয়ে জনগণের কাছে যাবে। যাদের আইডিয়া জনগণের ভালো লাগে শিক্ষার্থীদের ভালো লাগবে সেটা গ্রহণ করবে। যাদের আইডিয়া ভালো লাগবে না সেটা সমালোচনা করবে। কিন্তু ভালো লাগা অথবা সমালোচনা করা এখানে কেউ ইন্টারফেন্স করতে পারবে না। কেউ হকিস্টিক অথবা স্টাম্প নিয়ে যাবে না। কেউ মাসল পাওয়ার এখানে প্র্যাকটিস করতে পারবে না। বরং ছাত্র রাজনীতি আমাদের ক্যাম্পাসগুলোতে হবে ওয়েলফেয়ার সেন্ট্রিক এবং পলিসি সেন্ট্রিক।

তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি নতুন ধারার এই ছাত্র রাজনীতি জুলাইবিপ্লব পরবর্তী আমরা দেখতে পাচ্ছি ছাত্রসংগঠনগুলো চর্চা শুরু করছে। একই সাথে ছাত্রসংসদ নির্বাচন পরবর্তী আমরা আমাদের যে ইশতেহারগুলো দিয়েছিলাম, আমরা যে কথাগুলো বলেছিলাম একটি স্বপ্নের ক্যাম্পাস সেই স্বপ্নের ক্যাম্পাস এবং স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনিমার্ণ করার জন্য আমরা আমাদের জায়গা থেকে লড়াই সংগ্রাম জারি রাখছি এবং আমাদের স্বপ্নের ক্যাম্পাসে আমাদের যেই কাঙ্খিত স্বপ্ন সে স্বপ্নের ক্যাম্পাসে একজন শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষ থেকে তার পড়াশোনার চমৎকার পরিবেশ থাকবে, তার গবেষণার পরিবেশ থাকবে, তার আবাসন সংকট থাকবে না, তার স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা থাকবে, তার খাদ্যের নিরাপত্তা থাকবে এবং আমাদের নারীদের জন্য একটা নিরাপদ ক্যাম্পাস আমরা গড়ে তুলব। সেইসব সেরা ক্যাম্পাস এবং স্বপ্নের বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য আমরা যারা তরুণ আছি, আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে এবং এই বাংলাদেশ একটি ন্যাশন হিসেবে বিলং করার জন্য আমাদের লিডারশিপ দরকার।

বিগত ৫৪ বছরে এই বাংলাদেশের অনেক নেতা তৈরি হয়েছে কিন্তু এই নেতাদের মাধ্যমে জাতির মুক্তি হয়নি। আমাদের এই বিপ্লব পরবর্তী যদি আমরা শহীদ আকাঙ্ক্ষার আলোকে তারণ্যের বাংলাদেশ, নতুন বাংলাদেশ বিনিমার্ণ করতে চাই, তাহলে আমাদের ইয়ং যারা আছে তাদেরকে পেট্রিয়টিক লিডারশিপ হিসেবে তাদেরকে গড়ে উঠতে হবে।

তাই আমি বিশ্বাস করি এই তারুণ্যের উৎসবের মাধ্যমে আমাদের এই অসাধারণ যে উদ্যোগ, আমাদের যে স্বপ্ন শহীদদের আকাঙ্ক্ষার আলোকে যে বাংলাদেশ, সে বাংলাদেশ আমরা বিনিমার্ণ করতে পারব ইনশাআল্লাহ। সে যাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ সার্বিকভাবে আমরা এই উৎসবের সাথে আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব।
আমি আশা করব এই উৎসব শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের না এই উৎসব সারা বাংলাদেশের সারা বাংলাদেশের তরুণরা মিলে আগামী স্বপ্নের বাংলাদেশ শহীদের আগের আরো একটি বৈষম্যহীন ইনসাফ করবেন জানিয়ে আমি আমার কথা শেষ করছি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version