নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে ফেনী ও লক্ষ্মীপুরসহ ছয়টি জেলা নিয়ে নতুন বিভাগ গঠনের আহ্বান জানিয়েছে বাস্তবায়ন কমিটি।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে এই দাবি তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক এ কে এম মোজাম্মেল হক লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

তিনি বলেন, ‘জনসেবার জন্য প্রশাসন এবং তৃণমূলের দ্বারগোড়ায় বিভাগীয় প্রশাসনিক সেবা পৌঁছাতে রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াসহ ৬ জেলাকে নিয়ে নোয়াখালী বিভাগ প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা নোয়াখালীর সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আপনাদের মাধ্যমে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অন্তবর্তীকালীন সরকারের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন দেশে নতুন বিভাগ গঠনে নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় কোনো গণশুনানি করেনি।

ওইসব জেলার মানুষের মতামত ছাড়াই কুমিল্লাকে বিভাগ হিসেবে প্রস্তাব করা এবং বৃহত্তর নোয়াখালীকে অন্তর্ভুক্ত করা উদ্যোগে নোয়াখালীবাসী কোনোভাবে গ্রহণ করবে না।

‘কুমিল্লা বিভাগ’ প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজধানী ঢাকা থেকে কুমিল্লার দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার এবং ফোরলেন সড়কে এই যাতায়াতের সময় লাগে মাত্র এক দেড় ঘণ্টা।

রাজধানী থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা যা রাজধানী থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটারের পথ। সুতরাং ঢাকার লাগোয়া অর্থাৎ আরেকটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠনের যৌক্তিকতা নেই বলে প্রশাসন বিশেষজ্ঞরাও মনে করে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

কুমিল্লা জেলা সদর থেকে মাত্র ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার পূর্ব পাশেই বিবিরবাজারে সঙ্গে ত্রিপুরার সোনামুড়া বাজার। সংগত কারণেই ভারত সীমান্তের লাগোয়া এলাকায় উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক দফতর স্থাপন দেশের প্রতিরক্ষার জন্য কোনোভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়।

এ কে এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘নোয়াখালী বিভাগ গঠন হলে নোয়াখালীকেন্দ্রিক উপকূলীয় অঞ্চলটি একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে বিকাশ লাভ করবে বলে বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা। ৬ জেলাকে নিয়ে নোয়াখালী বিভাগ গঠন সময়ের যুক্তিসংগত দাবি। নোয়াখালীর দক্ষিণে রয়েছে ব্লু ইকোনোমি তথা সুনীল অর্থনীতির অপার সম্ভাবনা। এই সুনীল অর্থনীতিকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে এক অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করতে সক্ষম হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে নোয়াখালীর বাসিন্দা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘আমরা একটি দাবি করতে চাই, নোয়াখালী প্রায় তিনশ বছরের অধিক একটা পুরাতন জেলা। এখন নোয়াখালীর যে ভৌগোলিক অবস্থান তার চাইতে আরও ২ হাজার কিলোমিটার এই বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। একটি সমুদ্র বন্দর, একটি নৌ বন্দর, একটি অর্থনৈতিক জোনসহ অনেক কিছু এই অঞ্চলে হচ্ছে। প্রায় এক কোটি মানুষ নোয়াখালীতে বসবাস করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এই বাংলাদেশের সৃষ্টির সঙ্গে এই নোয়াখালীর কমরেড তোহাসহ নেতারাও প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে আমরা এখানে নির্দ্বিধায় বলতে পারি সিরাজুল আলম খানের জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো কিনা এটা সন্দেহ। আমি তাই বলতে চাই, আসম আবদুর রব যদি সেদিন স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন না করতেন তাহলে বাংলাদেশের মানুষ আমরা এই পতাকা দেখতে পেতাম না। নোয়াখালীর মানুষ সব বরণ্য ব্যক্তিরা-ব্যক্তিত্বরা সব সময় আন্দোলন-সংগ্রামের অংশ নিয়েছেন। আমি এই কথাটি বলতে চাই, আমাদের দাবি যৌক্তিক… এই দাবি মেনে নিয়ে সরকার পদক্ষেপ নেবে।’

বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘আমি কথা দিচ্ছি বিএনপি যদি আগামীতে ক্ষমতায় আসে আমার জোর প্রচেষ্টা থাকবে এটিকে বিভাগ করার জন্য। আমি আরেকটু সাহস পাচ্ছি এই বৃহত্তর নোয়াখালীর কৃতি সন্তান যার ওপর বাংলাদেশের মানুষ ভরসা রাখেন উনি হলেন বেগম খালেদা জিয়া। এই বিভাগটি করার জন্য আমরা উনার (খালেদা জিয়া) সাহায্য নেব এবং তার অনুপ্রেরণা, উনার উদ্যোগেই নোয়াখালী বিভাগ হবে… আমি আশা করি ‘

সংবাদ সম্মেলনে নোয়াখালী সমিতির সভাপতি এম এ খান বেলাল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাবুদসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version