বিশ্বজুড়ে স্মার্ট সিটি বা স্মার্ট নগরায়নের ধারণা দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডেটা, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) এবং পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো ব্যবহার করে নগর জীবনকে আরও নিরাপদ, আরামদায়ক ও টেকসই করে তোলার লক্ষ্য নিয়েই ইউরোপ থেকে এশিয়া, আমেরিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্য—সকল প্রধান শহর প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। এর উদ্দেশ্য একই—যানজট, দূষণ, জ্বালানি অপচয় এবং প্রশাসনিক জটিলতা কমিয়ে নাগরিকবান্ধব ও টেকসই শহর গড়ে তোলা।

টোকিও, জাপান :

সব মিলিয়ে বলা যায়, স্মার্ট সিটি শুধু প্রযুক্তি নয়, নাগরিকবান্ধব পরিকল্পনা। বার্সেলোনা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে, সিঙ্গাপুর পরিবহন ব্যবস্থায়, টোকিও দুর্যোগ মোকাবিলায়, আর হেলসিংকি টেকসই ডিজিটাল জীবনে বৈশ্বিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকি :

ইউরোপের বার্সেলোনা এ ক্ষেত্রে এগিয়েছে। ২০১১ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পের মাধ্যমে তারা স্মার্ট লাইটিং ও স্মার্ট পার্কিং সিস্টেম চালু করেছে। সিসকোর প্রযুক্তি সহযোগিতায় শহরের বিদ্যুৎ খরচ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব হয়েছে। একইভাবে সেন্সরভিত্তিক পার্কিং ব্যবস্থা যানজট অনেকটাই হ্রাস করেছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুর ২০১৪ সালে ‘স্মার্ট নেশন প্রজেক্ট’ হাতে নিয়ে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে বিপ্লব ঘটিয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় রোবটিক্স, বাসাবাড়িতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও শহরজুড়ে সেন্সর নেটওয়ার্ক এটিকে বিশ্বের স্মার্ট সিটির মধ্যে অন্যতম করে তুলেছে।

আমস্টারডামও স্মার্ট সিটির আরেক বড় উদাহরণ। ২০০৯ সালে শুরু হওয়া উদ্যোগে ‘ক্লাইমেট স্ট্রিট’ প্রকল্পে চালু হয়েছে জ্বালানি সাশ্রয়ী আলোকসজ্জা ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিভিন্ন ব্যবস্থা। নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত ডেটা শেয়ারিং ব্যবস্থা নগর পরিকল্পনাকে আরও গতিশালী করেছে। অপরদিকে, কোপেনহেগেন ২০২৫ সালের মধ্যে কার্বন-নিউট্রাল হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। সিমেন্সের সহযোগিতায় সেখানে চালকবিহীন ট্রেন প্রকল্প চালু হচ্ছে এবং স্মার্ট সিগন্যাল সিস্টেম সাইকেল যাতায়াতকে আরও সহজ করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল :

প্রযুক্তিনির্ভর টোকিওতে ভূমিকম্প ও সুনামির মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় এআইভিত্তিক আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। হিতাচির সহযোগিতায় তৈরি এ প্রযুক্তি শুধু জাপানের জন্যই নয়, দুর্যোগপ্রবণ বিশ্বের অন্যান্য শহরের জন্যও দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে নিউইয়র্কে ২০১৩ সালে চালু হওয়া স্মার্ট সিটি প্রকল্প নাগরিকদের ফ্রি ওয়াইফাই কিয়স্ক, ওপেন ডেটা উদ্যোগ ও স্মার্ট বিল্ডিং সেন্সরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খরচ ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের লন্ডন :

লন্ডনও তথ্যভিত্তিক শাসনের এক অনন্য উদাহরণ। এখানে লন্ডন ডেটা স্টোরের মাধ্যমে ৭০০-এর বেশি ডেটাসেট জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এআই-ভিত্তিক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শহরের যানজট কমাতে সহায়তা করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল আবার স্মার্ট সিটি উদ্যোগে ফ্রি ওয়াইফাই, এআই-চালিত ট্রাফিক সিস্টেম ও আইওটি সংযুক্ত অ্যাপার্টমেন্ট চালু করে এশিয়ার ডিজিটাল রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

নিউইয়র্ক :

মধ্যপ্রাচ্যে দুবাইয়ের স্মার্ট সিটি উদ্যোগ ভবিষ্যতের নগরব্যবস্থার রোল মডেল হয়ে উঠছে। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পে এখানে চালকবিহীন ট্যাক্সি, ব্লকচেইনভিত্তিক সরকারি সেবা ও স্মার্ট পুলিশ স্টেশন চালু হয়েছে যেখানে কোনো কর্মকর্তার উপস্থিতি ছাড়াই সেবা পাওয়া যায়। অন্যদিকে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকি পুরো শহরের ডিজিটাল টুইন ‘হেলসিংকি থ্রিডি প্লাস’ তৈরি করেছে। পরিবহন ব্যবস্থায় অ্যাপের মাধ্যমে বাস, ট্রাম, ট্যাক্সি ও রেন্টাল বাইক—সব একসাথে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে।

তথ্যসূত্র : সাসটেইনেবিলিটি ম্যাগাজিন

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version