গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলার সময় বাক্সের আঘাতে মারা গেছেন ফিলিস্তিনি এক নার্স, ওদাই আল-কুরআন।

সোমবার (৪ আগস্ট) এই ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) মিডলইস্ট আই ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ওদাই আল-কুরআন বিমান থেকে ফেলা ত্রাণ সংগ্রহের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু একটি ত্রাণবাহী বাক্স তার ওপর পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন।

দ্য ইনডিপেনডেন্ট জানায়, সময়মতো সরে যেতে না পারায় ওদাই বাক্সের নিচে চাপা পড়েন।

ওদাইয়ের চাচাতো ভাই মু’তাসিম বলেন,

“সে বিবাহিত, দুই সন্তানের বাবা। গত চার মাস ধরে অনাহারে ছিল, গাজার বহু মানুষের মতো।”

গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ত্রাণ পাঠানো যাচ্ছে না। ফলে অনেক দেশ আকাশপথে ত্রাণ পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। তবে এতে একদিকে যেমন খাদ্যের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে, অন্যদিকে ত্রাণের বাক্স সাধারণ মানুষের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজা এখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া এই সংকটে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৮০ জন মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন।

এই প্রথম নয়।
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে তিন বছর বয়সী সামি মাহমুদ আয়াদ দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসিতে একটি ত্রাণ বাক্সের প্যারাস্যুট বিকল হয়ে তাঁর তাঁবুর ওপর পড়লে মারা যায়।

এছাড়া, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে পরিচালিত “গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)”-এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সংঘটিত হামলায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

জিএইচএফ–এর হয়ে কাজ করা সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা এবং তথ্য ফাঁসকারী অ্যান্থনি আগুইলার অভিযোগ করেন,

“আমি নিজের চোখে দেখেছি, কীভাবে ইসরায়েলি সেনা ও জিএইচএফ–এর ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ত্রাণ নিতে আসা নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেছে।”

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, আকাশপথে ত্রাণ ফেলা ‘দ্রুত ও সঠিক সহায়তা’ নয়, বরং এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ ও অকার্যকর পদ্ধতি, যা দুর্ভিক্ষের মোকাবিলায় যথেষ্ট নয় এবং বহু সাধারণ মানুষের জন্য মারাত্মক প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version