২০০৬ সালের ৩ আগস্ট, প্রেমের পরিণতি হিসেবে ঘর বাঁধেন সঙ্গীতশিল্পী তাহসান ও অভিনেত্রী মিথিলা। তারকা এই দম্পতি তখন ছিলেন সবার প্রিয় ও বেশ আলোচিত।

৩০ এপ্রিল ২০১৩ সালে এই তারকা দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেয় একমাত্র সন্তান আইরা। কিন্তু সংসার আলো করে সন্তান আসলেও গেলো দুই বছর ধরে এই দম্পতির সংসারজীবন ভালো যাচ্ছিল না। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে  ২০১৭ সালে যৌথভাবে বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেন এই যুগল।

তাহসান-মিথিলার বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা দেশে আলোচনার বিষয়বস্তুতে রূপ নিয়েছিল। তাদের ভক্ত-অনুরাগীরা কোনোভাবেই এটা মেনে নিতে পারছিলেন না। বিচ্ছেদের পর কেটে গেছে আট বছর। তবে বিয়েবিচ্ছেদ নিয়ে কখনো কাদা ছোড়াছুড়ি করেননি তাদের কেউই। দীর্ঘ সময় পর সেই সময় নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন মিথিলা। একটি পডকাস্টে অতিথি হিসেবে হাজির হয়ে এ নিয়ে কথা বলেন এই অভিনেত্রী। 

মিথিলা বলেন, যেকোনো বিচ্ছেদ বা যেকোনো সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া সহজ না, খুবই কঠিন। বন্ধু বা এটা যেকোনো ক্ষেত্রে হতে পারে। আমি তখন অনেক অল্পবয়সি এবং তরুণী মা। যেকোনো ভালো-মন্দ বিচার করব বা কোনো একটা সিদ্ধান্তে আসব, সেই শক্তি আমার ছিল না। কারণ আমার ১ বছরের একটা বাচ্চা। আমার মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না, যেখানে নিজের জন্য কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারব।

মিথিলার জীবনে এই পরিবর্তন মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। তা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, ২৩ বছর বয়স থেকে আমি আমার জীবনকে একভাবে ভেবে এসেছিলাম। হঠাৎ জীবনটা সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমি আমার শ্বশুরবাড়ির মানুষদের সঙ্গে থেকেছি। একে তো আমার বাচ্চা আছে, তারপর জানলাম সেই জায়গাটা আমার ভবিষ্যত না। আমি তখন চাকরি করতাম। কিন্তু আমার একটা গাড়িও ছিল না। কিন্তু আমার তো অভ্যাস ছিল গাড়িতে করে বাইরে যাওয়ার, আমার বাচ্চার অভ্যাস ছিল গাড়িতে চড়ার। 

নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার গুরুত্ব দিয়ে মিথিলা বলেন, আসলে মেয়েদের নিজের জায়গা থাকে না। শ্বশুরবাড়ি আবার বাবার বাড়ি, থ্যাঙ্কফুলি এখন আমার নিজের জায়গা আছে। মেয়েদের সবার আগে যেটা দরকার সেটা হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। এই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া জীবনের অন্য সব সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়।

বিবাহবিচ্ছেদের সময়ে অর্থনৈতিকভাবে মিথিলা অতটা সাবলম্বী ছিলেন না। তা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, এখন হয়তো মেয়েরা অনেক বেশি সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। কারণ এখন মেয়েরা অনেক বেশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পাচ্ছে। আমাকে ছোটবেলা থেকে মা বলেছে, যা-ই করো নিজের পায়ে দাঁড়াবে। ফলে বিয়ের পরও আমি আমার পড়াশোনা, চাকরি সব চালিয়ে গেছি। তখন আমি অর্থনৈতিকভাবে অতটা স্বাধীন ছিলাম না যে, একা একা অতটা ভাবতে পারব, বাচ্চা মানুষ করতে পারব। সেটার জন্য সময় লেগেছে।

২ বছর আলাদা থাকার পর বিবাহবিচ্ছেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন মিথিলা। এ অভিনেত্রী বলেন, ২০১৫ সালে আমরা সেপারেশনে গেছি, তারপরে আরও দু বছর গেছে। আমি অপেক্ষা করেছি, ভেবেছি যে এটা ঠিক হয়ে যাবে, ঠিক হয়ে যাবে। মানসিকভাবে এটা মেনেই নিতে পারছিলাম না। ২০১৭ সালে এসে সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে, আমাদের এই সম্পর্কটা  আসলেই কাজ করবে না।

তাহসানের সঙ্গে সংসার ভাঙার পর ২ বছর একা ছিলেন মিথিলা। ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর কলকাতার পরিচালক সৃজিত মুখার্জির সঙ্গে ঘর বাঁধেন মিথিলা। পেশাগত দায়িত্ব পালন ও স্বামী সংসার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অভিনেত্রী। 

মিথিলার সঙ্গে সংসার ভাঙার পর দীর্ঘদিন একা ছিলেন তাহসান খান। বিচ্ছেদের ৭ বছর পর ব্রাইডাল মেকআপ আর্টিস্ট রোজা আহমেদকে বিয়ে করেন। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন তারা। 

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version