জেলখানা মানেই শাস্তি, অপরাধ আর নিষেধের জায়গা। কেউ যখন অপরাধ করেন, তখনই আদালতের আদেশে তাকে জেলখানায় পাঠানো হয়। কয়েদিদের জীবন কেমন হয়—এ নিয়ে বহু মানুষের মনে কৌতূহল থাকে। কিন্তু যারা কখনো জেলে যাননি, তাদের পক্ষে সে অভিজ্ঞতা অর্জন করাও সম্ভব নয়। এবার সেই চিত্র পাল্টে যাচ্ছে।

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা—অপরাধ না করেও টাকা দিয়ে কারাগারে থাকার সুযোগ!

রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পুনরায় সাজানো হচ্ছে পর্যটন ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে। এরই অংশ হিসেবে একটি অংশে তৈরি করা হচ্ছে ‘Feel the Jail’ (ফিল দ্য জেল) নামের একটি ব্যতিক্রমী সাব-জোন, যেখানে সাধারণ মানুষ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কয়েদি হিসেবে থাকতে পারবেন—শুধুমাত্র নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে।

কেমন হবে অভিজ্ঞতা?
এই সাব-জোনে একজন অংশগ্রহণকারী ঠিক কয়েদিদের মতোই অভিজ্ঞতা পাবেন।
তাকে ‘রিসিভ’ করা হবে কয়েদির মতো করে। এরপর সেই ব্যক্তিকে রাখা হবে নির্দিষ্ট সেলে, থাকবে কয়েদিদের জন্য নির্ধারিত গোসল, খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা। সশ্রম বা বিনাশ্রম—যে ধরনের অভিজ্ঞতা চায়, তার ওপর নির্ভর করে মিলবে সেই পরিবেশ। অর্থাৎ, অপরাধ ছাড়াই আপনি পারবেন কয়েদি জীবনের স্বাদ নিতে!

তিনটি জোনে বিশাল ঐতিহাসিক প্রকল্প
২০১৬ সালে পুরান ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তর করা হয় কেরানীগঞ্জে। এরপর এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি নিয়ে নেওয়া হয় বিশেষ পরিকল্পনা। ২০১৮ সালে অনুমোদন পায় ‘পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন’ নামের একটি মেগা প্রকল্প।

এই প্রকল্পকে তিনটি ভাগে (A, B, C জোন) ভাগ করা হয়। A ও B জোন সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। C জোন হবে টিকিট কেটে প্রবেশযোগ্য, যেখানে থাকবে ‘ফিল দ্য জেল’ অভিজ্ঞতা এবং প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর।

অক্টোবরেই উদ্বোধন
প্রকল্পের বি জোনের কাজ প্রায় শেষ। এখানে থাকবে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, চক মার্কেট স্টাইলের কমপ্লেক্স, বই ও খাবারের দোকান, পার্কিং স্পেস, সুইমিং পুল, খেলার মাঠ, শিশু পার্ক ও হাঁটার পথ।
এই অংশটি আগামী অক্টোবরেই উদ্বোধন করা হতে পারে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ENCG ব্রাঞ্চ ওয়ার্কস ডাইরেক্টরেট এবং কারা অধিদপ্তর। নির্মাণ করছে রূপায়ণ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।

ইতিহাস-ঐতিহ্যের চিত্র
এই কারাগারের ইতিহাস প্রায় ২২৮ বছরের। তবে প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, এটি আসলে আড়াই হাজার বছরের পুরনো জনপদের অংশ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এর নেতৃত্বে খননে পাওয়া গেছে প্রাচীন দুর্গের দেয়াল, কূপ, নর্দমা, সিরামিক ধরণের মৃৎপাত্র, মুদ্রা, পোড়ামাটির ভাস্কর্য ইত্যাদি।

তিনি বলেন, “এই নিদর্শন প্রমাণ করে এখানেই খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকেও জনবসতি ছিল। ঢাকায় সম্ভবত একসময়ে ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র।”

ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা নয়, ঐতিহ্যের গুরুত্ব
আগে প্রকল্পটিতে শেখ মুজিব ও জাতীয় চার নেতাকে প্রাধান্য দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছিল।
তবে বর্তমান সরকারের অধীনে ঢাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, পুরান ঢাকার ইতিহাস ও জনগণের জীবনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ যা বলছে: প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুবুর রব বলেন— “এই প্রকল্প শুধু ঐতিহ্য সংরক্ষণ নয়, পুরান ঢাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নেও কাজ করবে। পর্যটনের পাশাপাশি থাকবে সুইমিং পুল, জিম, খেলার মাঠ ও অন্যান্য সুবিধা।”

পলিটিক্স/মি

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version