২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের খাস কামরায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দি গ্রহণ শুরু হয় বিকেল সোয়া ৫টায় এবং শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে।
আদালত সূত্র জানায়, দুই দফায় মোট আট দিনের রিমান্ড শেষে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক সৈয়দ সাজেদুর রহমান তাকে আদালতে হাজির করেন। এ সময় নুরুল হুদা ‘স্বেচ্ছায়’ জবানবন্দি দিতে সম্মত হলে আদালত তা রেকর্ড করার অনুমতি দেয়।
এ বিষয়ে আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের দায়িত্বে থাকা এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, মামলাটি তদন্তাধীন থাকলেও সাবেক সিইসি নুরুল হুদার জবানবন্দি মামলার গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মামলার প্রেক্ষাপট
গত ২২ জুন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং গুম, খুন ও মামলা সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান শেরে বাংলা নগর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সংশ্লিষ্ট সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের পাশাপাশি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, একেএম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ একাধিক উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগ
এজাহারে বলা হয়, তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ‘গায়েবি মামলা, অপহরণ, গুম, খুন ও নির্যাতনের’ মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয় দেখিয়ে গণগ্রেপ্তার করা হয়, যার ফলে তারা নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে কার্যত বঞ্চিত হন।
তথ্য অনুযায়ী, সংবিধান লঙ্ঘন, নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ, সরকারি পদে থেকে নির্বাচনে প্রভাব খাটানো এবং মিথ্যা ফলাফলের মাধ্যমে বিজয়ী ঘোষণা করার অভিযোগ রয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। এ সকল অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মতো গুরুতর অভিযোগের আওতায় পড়ে।
সাক্ষ্য ও তদন্তের দিক
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের হাজারো ভোটার, যারা ভোট দিতে পারেননি, সেইসঙ্গে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক সৎ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারা এ ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। ব্যালট পেপারে থাকা সিল ও স্বাক্ষরের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমেও অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও গ্রেপ্তার
সাবেক সিইসি নুরুল হুদার জবানবন্দির পর একই মামলায় ২০২৪ সালের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকেও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।