গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে এক্সকাভেটর দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটার কারণে নদীর গতিপ্রকৃতি বদলে যাচ্ছে। নদীর বাঁধের ওপর দিয়ে ট্রাক্টর ও ট্রাক চলাচল করায় বাঁধও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ কেটে গাড়ি ওঠানামার রাস্তাও তৈরি করা হয়েছে। এতে নদীর চরাঞ্চল ও আশপাশের ফসলি জমি ডোবায় পরিণত হচ্ছে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চক রহিমাপুর এলাকার শিক্ষার্থী মো. ইব্রাহিম প্রিন্স বলেন, ‘প্রতিদিন ট্রাক্টরভর্তি মাটি যায়। স্কুলে যেতে ভয় লাগে—কখন ধাক্কা দিয়ে যায় কে জানে।’ একই এলাকার অভিভাবক সুজা মিয়া বলেন, ‘সন্তানদের একা স্কুলে পাঠাতে ভয় হয়। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা হতে পারে।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের নীরবতায় দিনে-দুপুরে চলছে এই মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য। চক রহিমাপুরের মাটি ব্যবসায়ী মো. এনামুল বলেন, ‘প্রশাসন কখনো আসে না। সাংবাদিকেরা ফোন করলে তবেই তারা আসে।’ ফকিরগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী মাহবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জমি নদীর মধ্যে। সেখান থেকে মাটি কেটে বিক্রি করি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এসব মাটি ইটভাটা ও বিভিন্ন নির্মাণকাজে ব্যবহার হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাটিখেকোদের পরামর্শ দিয়ে তাঁদের জলাশয় বা পুকুর খননের আবেদন করতে বলেন। সেই সুযোগে অবৈধভাবে নদীর চর ও আশপাশের মাটি কাটা চলছে।

উপজেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এম এ মতিন মোল্লা বলেন, ‘প্রশাসনের নীরবতায় মাটি ব্যবসা দিনের পর দিন চলছে। গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হচ্ছে। অবৈধভাবে মাটি পরিবহন বন্ধে প্রশাসনকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’

এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, ‘প্রথমবার আপনার কাছ থেকে শুনলাম। তারপরও বিষয়টি প্রশাসনের সঙ্গে শেয়ার করব।’

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘সাংবাদিকের কাজ রিপোর্ট করা। আপনারা নিউজ করেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করি।’

স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে অবৈধ মাটি কাটা ও পরিবহন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পরিবেশ ও কৃষিভিত্তিক জীবনযাত্রা চরম হুমকির মুখে পড়বে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version