দেশের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় জনগণ ঐক্যবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (৬ জুলাই) রাতে রাজধানীর গুলশানের হোটেল রেনেসাঁয় ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য’ শীর্ষক সংলাপে তিনি বলেন, “আমরা যেটা আলোচনা করেছি, তাতে একটা বিষয়ে একমত হয়েছি—জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ। কেউ কেউ বলছেন মতভেদ আছে, কিন্তু বাস্তবে জনগণের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে, যা স্বাভাবিক।”
তিনি আরও বলেন, “প্রয়োজনের সময় বাংলাদেশের মানুষ সবসময় ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। দেশের প্রতিটি সংকটে, প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেছে। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে—তিতুমীর থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে জাতি এক হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত উদাহরণ টেনে বলেন, “৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন এবং ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জনগণ একযোগে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় লড়াই করেছে। এটাই আমাদের ঐতিহাসিক ঐক্যের প্রমাণ।”
আলোচনায় তিনি বলেন, “আমাদের জনগণকে ক্ষমতায়িত করতে হবে, দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে হবে। তবেই জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং গণতন্ত্র, উন্নয়নসহ অন্যান্য বিষয়গুলো সহজ হয়ে উঠবে।”
গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা গণতন্ত্র চর্চা করতে গিয়ে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। তাই আজ আমাদের একমত হতে হবে—গণতন্ত্রই জাতীয় নিরাপত্তার মূল ভিত্তি। কেউ কেউ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলেও আমি ইতিবাচকভাবে দেখি। দেশের মানুষ আলোচনা করছে, তর্ক করছে—এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এভাবেই আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের পথ খুঁজে পাবো।”
তিনি বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। সেটি হলে অন্য সমস্যাগুলোও সমাধান সহজ হবে।”
বিএনপি বহু আগেই রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলেছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “২০১৬ সাল থেকে আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলে আসছি। ২০২৩ সালে ৩১ দফা ঘোষণা করেছি, যেখানে রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো সংস্কারের রূপরেখা রয়েছে।”
ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (FSDS)-এর আয়োজনে এই জাতীয় সংলাপে সভাপতিত্ব করেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর।
আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের আহ্বায়ক বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) নূর উদ্দিন খান, বিএনপি নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, শিক্ষাবিদ মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, কবি ফরহাদ মজহার, মনির হায়দার, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী মহলের প্রতিনিধিরা।