দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ‘টু-স্টেট সল্যুশন’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানায়, মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি ছিল দুই দেশের মধ্যে গত অক্টোবর থেকে চতুর্থ উচ্চপর্যায়ের বৈঠক—যা সম্পর্ক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘ সময়ের টানাপোড়েনের পরে এই অগ্রগতি কূটনৈতিক মহলে নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিচ্ছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, বৈঠকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয় এবং উভয় দেশ সম্পর্ক আরও গভীর করার ব্যাপারে একমত হয়। পাশাপাশি, উঁচুপর্যায়ের সফরের পরিকল্পনার কথাও জানানো হয়।
গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় এবং ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের বিষয়ে উভয় পক্ষ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। একইসঙ্গে, সম্মেলন থেকে বাস্তবভিত্তিক ও ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত আশা করেন তারা।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন আরও জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর থেকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। অতীতে বাংলাদেশে পাকিস্তানবিরোধী অবস্থান থাকলেও, সরকার পরিবর্তনের পর দুই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এখন বাস্তববাদী ও ভবিষ্যতমুখী নীতিতে এগোচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসামুক্ত প্রবেশের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়—যাকে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চীন অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করছে এবং সার্ক প্ল্যাটফর্ম কার্যকারিতা হারাচ্ছে—এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন ভারসাম্য আনতে চাইছে। অতীতের মতভেদ ভুলে এখন দুই দেশ উন্নয়ন, বাণিজ্য ও কৌশলগত স্বার্থে ইস্যুভিত্তিক সহযোগিতার দিকে এগোচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই কূটনৈতিক অগ্রগতি পাকিস্তানের দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে অবস্থান তৈরি, মুসলিম বিশ্বের ঐক্য জোরদার এবং বৃহত্তর আঞ্চলিক কূটনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের একটি কৌশলগত উদ্যোগ।
একইসঙ্গে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানি কূটনীতিকদের ওপর থাকা কিছু নিষেধাজ্ঞা এবং পণ্যে আরোপিত প্রতিবন্ধকতা তুলে নেয়, যা সম্পর্ক উন্নয়নের পথে বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।