একই কবরে দুই ভাইবোন—উত্তরার মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিঝুমের একদিন পর না ফেরার দেশে পাড়ি দিল ছোট ভাই নাফি।
১৩ বছর আগে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আশরাফুল ইসলাম ও তাহমিনা দম্পতির পরিবারে জন্ম নেয় এক ফুল, নাম ছিল নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম। নিঝুমের জন্মের চার বছর পর আসে আরেক আনন্দের বারতা—ছোট ভাই আরিয়ান আশরাফ নাফি। নিঝুম তখন ছায়ার মতো আগলে রাখতো ভাইটিকে।
কিন্তু এই দুই শিশুর জীবনে হঠাৎ নেমে এলো ভয়ংকর অন্ধকার। গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনে বিধ্বস্ত হলে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয় নিঝুম ও নাফি। দুজনকেই ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে।
সেই রাতেই নিঝুম মৃত্যুর কাছে হার মানে। তার ঠিক একদিন পর, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে চলে যায় ছোট ভাই নাফিও।
এক দিনের ব্যবধানে দুটি কবর খোঁড়া হয়। নাফিকে দাফন করা হয় বোনের পাশেই, উত্তরার কামারপাড়ার এক কবরস্থানে।
এভাবে হঠাৎ দুই সন্তান হারিয়ে নিঃসন্তান হয়ে গেলেন আশরাফুল-তাহমিনা দম্পতি। যারা সন্তানদের মানুষ করতে চেয়েছিলেন স্বপ্নের মতো—একজন ডাক্তার, অন্যজন ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চেয়েছিলেন। ভর্তি করিয়েছিলেন ভালো স্কুলে, কাছাকাছি মাইলস্টোনে। নিঝুম ছিল ষষ্ঠ শ্রেণিতে, নাফি দ্বিতীয় শ্রেণির ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থী।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান জানান, নিঝুমের শরীরের ৯০ শতাংশ ও নাফির ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
শোক শুধু রাজধানীতে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর গ্রামেও—যেখানে দাদা-দাদীর ভিটায় এখন শুধু কান্নার ধ্বনি। নাফির চাচা মো. হাসান বলেন, “আমার ভাই ও ভাবি এখন নিঃসন্তান। দুই মেধাবী শিশুকে হারিয়ে পরিবার পুরোপুরি স্তব্ধ।”
সরকারি হিসাবে এই বিমান দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত ২৯ জন, আহত ৬৯ জন। তবে নিঝুম-নাফির মৃত্যু যেন আলাদা এক ধাক্কা—যা কোনো পরিসংখ্যানে মাপা যায় না।