বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও রাকসুর সাবেক ভিপি রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “জুলাই সনদের আইনি বৈধতা নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দল আলোচনা করছে। কেউ বলছে, জুলাই সনদ পাস না হলে ২০২৯ সালের নির্বাচন হবে। এগুলো হলো ফ্যাসিবাদী কণ্ঠস্বর ও ফ্যাসিবাদী আওয়াজ। কেন এগুলো বলা হচ্ছে? এটি সত্যিই রহস্য তৈরি করছে।”
তিনি এসব মন্তব্য করেন ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) টিএসসিতে রাবি শাখা ছাত্রদল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, একটা জিনিস সবাই মিলে করেছেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা ছিলেন, সবাই মিলে একটি জায়গায় আসুন যাতে একইদিনে নির্বাচন এবং গণভোট করা যায়। এতে জুলাই সনদেরও আয়নিকরণ করা হবে এবং জনগণ যাদের ভোট দিবে, তারা সরকার গঠন করবে। কিন্তু এটা নিয়ে আগেই এতবেশি হইচই করে যে কাজগুলো হচ্ছে, তাতে কিন্তু ফ্যাসিস্টদেরই পুনরুত্থান ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে গণতান্ত্রিক শক্তি সজাগ নাহলে জাতির কপাল খুব একটা ভালো হবে আমি মনে করি না।
জিয়াউর রহমানের অবদান তুলে তিনি বলেন, ১৯৭২ এর পর থেকে আত্মপরিচয়ের সংকট তৈরি করেছিল শেখ মুজিবুর রহমান। আত্মপরিচয়ে নিয়ে তখন বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এই বিতর্ক নিরসন করতে পারেনি শেখ মুজিবুর রহমান। সবাইকে বলেছিল, ‘বাঙালি হয়ে যাও।’ কিন্তু বাঙালিতো অন্য দেশেও রয়েছে। তখনতো প্রশ্ন আসে কোন দেশের বাঙালি। উপজাতি নেতাদেরকেও বলেছিল, ‘তোরাও বাঙালি হয়ে যা।’ নৃতাত্ত্বিক পার্থক্য এক হবে কী করে? বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ধারণা দিয়ে এই বিতর্কের নিরসন করেছিলেন জিয়াউর রহমান।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ডাকসু’র নির্বাচিত প্রার্থীরা বিশেষ করে ভিপি, জিএস ও এজিএসসহ প্রত্যেকে বিগত ফ্যাসিবাদী আমল থেকেই হলে থাকতেন এবং তৎকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। অপরদিকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার কারণে ছাত্রদলসহ অন্য ছাত্র সংগঠনের কেউ তৎকালীন হলে থাকতে পারেনি। ফলে গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে আমরা বলে আসছিলাম, একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে। কিন্তু সেটা কোনোভাবেই তারা করতে পারেনি।
তিনি বলেন, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও যারা ভিপি-জিএস নির্বাচিত হয়েছে, তারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ফলে আমরা দেখেছি, ভিপি-জিএস হতে হলে পূর্বে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকতে হবে এমন একটা অবস্থা দেখেছি। তবে শিক্ষার্থীরা হয়তো ভোট দিয়েছেন অথবা অনিয়ম হয়েছে। তবে যেটাই হয়ে থাকুক, ছাত্রদল সবসময় ন্যায়, গণতন্ত্র ও শিক্ষার্থীদের পক্ষে আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, অনিয়মে ভরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোতে হয়তো ছাত্রদল প্রত্যাশিত ফলাফল করতে পারেনি। বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের পরেও আমরা বলেছি ছাত্রদলের আরও ভালো করা উচিত ছিল। আমরা যে চারটি ছাত্র সংসদে পরাজিত হয়েছি, এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বিগত সময়ে সকল অন্যায় ও জুলুমের প্রতিবাদ করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে এবং ১৪২ জন নেতাকর্মী শহিদ হয়েছে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন রাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলাম। সভায় রাবি শাখা ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকশত নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
