রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, “আমরা বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। মতের ভিন্নতা থাকবেই—এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য এবং এটি বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশেই দেখা যায়। তবে আসুন, আমরা বিভেদ ও সংঘাতের রাজনীতি থেকে কিছুটা হলেও সরে এসে দেশের কল্যাণে একত্রিত হই।”

সোমবার (৬ অক্টোবর) পিরোজপুরের জ্যেষ্ঠ বিএনপি নেতা মোতালেব আকনের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি। আমাদের মূল শক্তি বাংলাদেশের জনগণ। কাজেই বাংলাদেশের জনগণই আমাদের অনুপ্রেরণা।

এ দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে যতবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে, তারা ততবারই বিএনপির পক্ষে রায় দিয়েছে। কাজেই এটাই প্রমাণ করে বাংলাদেশের মানুষই বিএনপির আস্থার প্রতীক।’

দলের বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মী মোতালেব আকনকে উদ্দেশ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘তিনি একটি হুইল চেয়ারে বসে আসেন। এই অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত আছেন আপনারা জানেন তার এ অবস্থা কিভাবে হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের আঘাতে তার এই অবস্থা হয়েছে।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি বহুবছর যাবৎ প্রবাসে আছি, থাকতে বাধ্য হয়েছি বিভিন্ন কারণে। আমাদের দলেরসহ বহু মানুষ বিভিন্নভাবে গত ১৭ বছরে, গত বছরের জুলাইয়ে এবং তারও আগে বিভিন্ন সময়ে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য; সেটি ভোটের হোক, রাজনীতির হোক, অর্থনীতির স্বাধীনতার ক্ষেত্রেই হোক; বহু আন্দোলন হয়েছে দেশে, বহু সংগ্রাম হয়েছে, বহু মানুষ শহীদ হয়েছে। অনেক হয়েছে। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটা জায়গায় আসি। মতভেদ-ভেদাভেদ কমিয়ে নিয়ে আসি। আমরা কথা বলি।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন আদর্শ থাকতেই পারে, সেটাই থাকাটা স্বাভাবিক। আমরা বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, এখানে বিভিন্ন রকম মত থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীতে সব গণতান্ত্রিক দেশেই এটা আছে। কিন্তু আসুন, আমরা সেই ঝগড়া-ফ্যাসাদ থেকে কিছুটা হলেও সরে আসি।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আজ মোতালেব সাহেব তার সন্তানকে দেখালেন, এ রকম সন্তানের সংখ্যা বাংলাদেশে আরো লক্ষ-কোটি আছে। আমরা বলেছি, আগামী দিনে আমরা মেধার ভিত্তিতে দেশ ও জাতিকে গড়ে তোলার কথা বলেছি। স্বাভাবিকভাবেই মেধা যেখানে থাকবে, প্রতিযোগিতাও সেখানে থাকবে। আজকের তরুণ আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে। মেধা একেকজনের একেক রকম হয়। সবাইকে এক জায়গায় আমরা দিতে পারব না। মেধার রেসে যে এগিয়ে থাকবে, সে-ই সেখানে যাবে। কিন্তু যারা যেতে পারবে না তাদের জন্যও আমাদের ব্যবস্থা করতে হবে। আগামী দিনে দেশের লক্ষ-কোটি তরুণ যারা আছে, নারী-পুরুষ, প্রত্যেকে যাতে বেঁচে থাকার যুদ্ধে টিকে থাকতে পারে সেই ভাবে আমরা পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করছি। যাতে মোতালেব সাহেবের সন্তানরা ভবিষ্যতে নিজে সৎপথে উপার্জনের ব্যবস্থা করে নিতে পারে।’

দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লক্ষ লক্ষ মানুষ এ দেশের হাসপাতালের ফ্লোরে শুয়ে থাকে। যাতে ধীরে ধীরে এই চিত্রের পরিবর্তন করা যায়, মানুষের কাছে যাতে ভালো চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়া যায় সেই পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। লক্ষ-কোটি কৃষক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তার পরও তারা হাল ছেড়ে দেন না। তারা মাঠে থেকে কৃষিকাজ করছেন বলেই বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষ খেয়ে বেঁচে আছে। এই কৃষকদের পাশে কিভাবে দাঁড়ানো যায় সেই পরিকল্পনা করছি। বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে থাকা লক্ষ-কোটি মা-বোনদের কিভাবে আরেকটু স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা যায়, তাদের কিভাবে অর্থনৈতিকভাবে, শিক্ষার আলোকে গড়ে তোলা যায় সেই পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করছি।’

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version