ফিলিস্তিন ইস্যুতে এবার দৃঢ় অবস্থান নিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটি স্পষ্ট করে জানিয়েছে, পশ্চিম তীর দখলের যেকোনো পদক্ষেপ ইসরায়েলকে ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করাবে এবং আব্রাহাম চুক্তির মূল চেতনা ধ্বংস করবে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) আমিরাতের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক লানা নুসাইবেহ সতর্ক করে বলেন—পশ্চিম তীর দখল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথ বন্ধ করবে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে আমিরাতের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে।

মূলত ইসরায়েলের উগ্র-ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের পশ্চিম তীরের চার-পঞ্চমাংশ দখলের প্রস্তাব প্রকাশের পরই আমিরাত এ সতর্কতা জানায়। তবে ইসরায়েলি সরকার এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

আন্তর্জাতিক আইনে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের প্রায় ১৬০টি বসতি অবৈধ। বর্তমানে সেখানে প্রায় সাত লাখ ইহুদি এবং আনুমানিক ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করছে।

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো। তখন শর্ত ছিল, ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা স্থগিত রাখবে। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তখনই বলেছিলেন, পরিকল্পনাটি এখনো ‘টেবিলে’ আছে।

বর্তমান সরকারে থাকা অনেক মন্ত্রী পশ্চিম তীর দখলের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ইসরায়েলের দখল পরিকল্পনা আরও তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

লানা নুসাইবেহ বলেন, “আমরা আব্রাহাম চুক্তিকে সবসময় ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীন রাষ্ট্রের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষা পূরণের উপায় হিসেবে দেখেছি। পশ্চিম তীর দখল আমাদের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

অপরদিকে স্মোট্রিচ দাবি করেছেন, এখন সময় এসেছে “দখলের” এবং “মাঝখানে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র গড়ার ধারণা বাদ দেওয়ার।” তাঁর প্রদর্শিত মানচিত্রে দেখা গেছে, পশ্চিম তীরের ৮২ শতাংশ এলাকায় ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এই প্রস্তাবকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্নের জন্য সরাসরি হুমকি বলছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও একে ‘বর্ণবাদী ব্যবস্থা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। যদিও ইসরায়েলি সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এর আগে গত মাসে পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের অনুমোদন দেয় ইসরায়েলি সরকার। এতে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্লেষকদের মতে, পরিকল্পনাটি কার্যকর হলে পশ্চিম তীর পূর্ব জেরুজালেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version