জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, এক বছর অতিক্রমের পরও আমরা এখনো কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পাইনি। যদিও এক বছরে পূর্ণাঙ্গ অর্জন সম্ভব নয়, কিন্তু যতটুকু পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তাও আমরা পাইনি।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

সারজিস আলম লেখেন, “স্বৈরাচারী খুনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আপামর ছাত্র জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থান! লুকিয়ে দেশ ছেড়ে পালালো শেখ হাসিনা। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্যাতিত হয়ে আসা মানুষগুলো স্বপ্ন দেখতে লাগলো কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের।”

তিনি আরও লেখেন, “এক বছর অতিক্রম শেষে আমরা এখনো আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পাইনি। হয়তো এক বছরে পাওয়া সম্ভবও নয়। কিন্তু ১ বছরে যতটুকু পাওয়া সম্ভব ছিল ততটুকুও আমরা পাইনি। এক্ষেত্রে কারো দায় হয়তো কম, কারো হয়তো বেশি। কিন্তু এককভাবে কাউকে দায়ী করার সুযোগ নেই।”

তার মতে, একটি কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র গঠনে রাষ্ট্রের বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে একসঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। রাজনীতিবিদ, আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিভিল সোসাইটি, মিডিয়া, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী মানুষসহ সাধারণ জনগণ—সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ অপরিহার্য। একটি অংশ যদি সহযোগিতা না করে, তবে তা অন্য অংশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং সফলতা সম্ভব হয় না।

সারজিস লিখেছেন, “ব্যক্তি হাসিনা পালিয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে যে অসুস্থ এবং অপকর্মের চর্চাগুলো ক্ষমতায় থেকে তিনি ও তার বন্দোবস্ত অধিকাংশ মানুষের মননে, মগজে, চিন্তায়, অস্থিমজ্জায়, ভাবনায়, আচরণে সন্নিবেশিত করেছেন—সেগুলো চাইলেই একটা ব্যক্তির মতো পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।”

তিনি বলেন, এই নষ্ট সিস্টেম, চিন্তা আর ব্যক্তিদের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হবে। সুযোগ পেলে যে রিকশাচালক ভাড়া বাড়িয়ে দেয়, সবজি বিক্রেতা দাম বাড়ায়, ব্যবসায়ী পণ্য মজুদ করে, সাধারণ মানুষ সুপারিশ প্রত্যাশা করে, রাজনীতিবিদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে, আমলা দালালি করে, সিভিল সোসাইটি স্বার্থের কাছে আত্মসমর্পণ করে, মিডিয়া ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করে—এদের কারও মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। সবাই যার যতটুকু সামর্থ্য, ততটুকুই অপব্যবহার করে।

তার ভাষায়, “আমাদের লড়াইটা ইন্ডিভিজ্যুয়াল জায়গা থেকে। প্রত্যেককে প্রত্যেকের কাজটা করতে হবে।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে লেখেন, “আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি আমাদের লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারি, তাহলে কিছুটা বিলম্ব হলেও আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ অর্জন সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন, “যে প্রজন্ম একটা অভ্যুত্থান করে শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্টের পতন ঘটাতে পারে, তাদের সামনে আগামীতে অন্য কেউ যে কোনো কিছু করে অন্তত পার পেয়ে যাবে না। ষড়যন্ত্র হবে, ফাঁদ থাকবে, মিডিয়া প্রোপাগান্ডা চলবে, মনোবল ভাঙার চেষ্টা হবে। কিন্তু দমে যাওয়ার সুযোগ নেই।”

তার মতে, করাপটেড সিস্টেমের সুবিধাভোগী অল্প কিছু কালো হাত অবৈধ অর্থে বিভাজন তৈরি করবে, বিশ্বাস ভাঙবে, একজনকে আরেকজনের প্রতিপক্ষ বানাবে। এই পরিস্থিতিতেও দাঁতে দাঁত চেপে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

শেষে তিনি লেখেন, “আমাদের যেই সহযোদ্ধারা নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, যারা হাত-পা-চোখ হারিয়েছেন, শরীরে এখনো বুলেট নিয়ে ঘুরছেন—তাদের সামনে রেখেই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই ত্যাগ কোনো মূল্যে বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। ৫ আগস্ট আমাদের কাছে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে একটি আমানত। সেই পরম আমানতের খেয়ানত না করাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ এনে দিতে পারে। ইনশাআল্লাহ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেটা করবো। ইনক্বিলাব জিন্দাবাদ।”

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version