অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র খাবারের সন্ধানে বের হওয়া অন্তত ৯১ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় সহায়তা নিতে গিয়ে ১১১ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেবল মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯১ জন। একই সময়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় আহত হয়েছেন ৮২০ ফিলিস্তিনি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের শুরু করা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬০ হাজার ২৪৯ জন ফিলিস্তিনি। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯ জন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৭ মে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী নতুন ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থার চালু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৩০ জন নিহত ও ৮ হাজার ৮১৮ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক দাতব্য সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) গাজায় নিয়োজিত তাদের কর্মী দালিয়ার একটি বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেছে।

বার্তায় দালিয়া বলেছেন, ‌‌‘‘গাজায় ক্ষুধা এখন আর ছায়া নয়; এটি আমাদের স্থায়ী সঙ্গী। প্রত্যেক দিন সকালেই আমি একই প্রশ্ন নিয়ে জেগে উঠি : আজ আমার সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য রুটি খুঁজে পাবো কি?’’

তিনি বলেন, ‘‘এক টুকরো রুটি এখন একখণ্ড ধনভাণ্ডার। এক চামচ ভাতই হয়ে ওঠে হাসির কারণ। আমার সন্তানেরা খাবার চায়, কিন্তু তার পরের নীরবতাই যেন কোনও বোমার চেয়েও বেশি গর্জে ওঠে।’’

ইসরায়েল — যা গাজায় সব ধরনের সরবরাহের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে — কিছু এলাকায় দিনের বেলা সামরিক অভিযান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখছে, যাতে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে পারে।

বর্তমানে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ কাজের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে ইসরায়েলি সংস্থা কোগাত (সিওজিএটি)। সংস্থাটি বলেছে, বুধবার ২৭০টি ত্রাণবাহী ট্রাক ও দুটি জ্বালানিবাহী ট্যাংকার গাজায় প্রবেশ করেছে। এছাড়াও মিসর, জর্ডান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সহায়তায় আকাশপথে ৩২টি প্যালেট থেকে ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছে।

তবে ত্রাণ সংস্থাগুলো বলেছে, গাজায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রয়োজন। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, গাজায় বর্তমানে যতটুকু ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় ‘‘সমুদ্রে এক ফোঁটা’’ পানি ফেলার মতো।

তিনি বলেন, রোববার গাজায় প্রবেশের পর জাতিসংঘের বেশিরভাগ খাদ্যবাহী ট্রাক লুট হয়ে গেছে। টম ফ্লেচার জানান, এসব ট্রাকের বেশিরভাগই ক্ষুধার্ত সাধারণ মানুষের ক্ষোভের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version