যুদ্ধের ক্ষত কাটিয়ে দ্রুতই আবার পরমাণু সক্ষমতা ফিরে পেতে পারে ইরান। এমনটাই সতর্কবার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি।
সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলায় ইরানের বেশ কয়েকটি পরমাণু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, সবকিছু ধ্বংস হয়নি। এখনও কিছু সাইট অক্ষত আছে। ফলে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই দেশটি আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কার্যক্রম শুরু করতে পারে— এমনকি আরও আগেও।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল একযোগে হামলা চালায় ইরানের সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর। পরে যুক্তরাষ্ট্রও হামলা চালায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচির জন্য গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্থাপনায়। ওয়াশিংটনের দাবি, এই পদক্ষেপে ইরানের পরমাণু অগ্রগতি ‘দশকের পর দশক পিছিয়ে গেছে’।
তবে আইএইএ প্রধান এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তার মতে, এটি অতটা সরল নয়। তিনি জানান, ইরানের হাতে বর্তমানে প্রায় ৪০০ কেজির বেশি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, যেটা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধিত। এই ইউরেনিয়াম আরও সমৃদ্ধ করলে তা দিয়ে ৯টিরও বেশি পরমাণু বোমা তৈরি করা সম্ভব।
গ্রোসি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা জানি না, হামলার পর এই ইউরেনিয়ামের কী পরিণতি হয়েছে। কিছু হয়তো ধ্বংস হয়েছে, কিছু হয়তো অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। স্পষ্টভাবে না জেনে কিছু বলা কঠিন।”
তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ইরানি পার্লামেন্ট সম্প্রতি আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ফলে সংস্থার পরিদর্শকরা ইরানে প্রবেশ করতে পারছেন না, নজরদারি ক্যামেরাও বসানো যাচ্ছে না— বিশেষ করে মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সাইট ফোর্দোতে।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে আবার আলোচনায় ফেরাতে নানা প্রলোভন দেখাচ্ছে বলেও আভাস মিলেছে।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, “ইরানে আইএইএ’র পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গ্রোসি ও তার সংস্থার পেশাদারিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।”
গ্রোসি বলেন, “আমাদের তেহরানে গিয়ে সরেজমিনে দেখতে হবে— আসলে কি আছে, কি ক্ষতি হয়েছে, এবং কি পদক্ষেপ এখন প্রয়োজন।”
এই অস্থিরতায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্যের পারমাণবিক রাজনীতি।