বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে দ্রুত দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আজ শনিবার সকাল থেকে নগর ভবন প্রাঙ্গণে আবারও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন করপোরেশনের কর্মচারীরা। তাঁদের স্পষ্ট ঘোষণা—ইশরাক দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।
গত ১৪ মে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবন থেকে জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, বিল পরিশোধ, নির্মাণ অনুমোদনসহ সব ধরনের নাগরিক সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। নগর ভবনের ফটকগুলো তালাবদ্ধ, স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয়ও ১৫ মে থেকে কার্যত অচল।
আজ সকাল ১১টা থেকে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে কর্মচারীরা নগর ভবনের নিচতলায় বিক্ষোভ শুরু করেন। কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমান জানান, “বিএনপির পক্ষ থেকে আন্দোলন স্থগিত করা হলেও ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে শুরু করা কর্মসূচি চলমান রয়েছে। যত দিন ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব না দেওয়া হচ্ছে, তত দিন কর্মসূচিও চলবে।”
আদালতের নির্দেশ ও রাজনৈতিক জটিলতা
২০২০ সালের ডিএসসিসি নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে ২৭ মার্চ নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল। ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। তবে ১৪ মে এক বাসিন্দা হাইকোর্টে রিট করলে মেয়রের শপথ বিলম্বিত হয়। পরে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট রিট খারিজ করে দেয়, ফলে আইনি বাধা আর নেই বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।
ইশরাক হোসেন বলেন, “হাইকোর্টে রিট করে আমাকে শপথ থেকে বিরত রাখার অপচেষ্টা হয়েছিল। এখন আর কোনো বাধা নেই, তাই সরকারের উচিত আর কালক্ষেপণ না করে দ্রুত আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা।”
প্রধান বাধা উপদেষ্টা
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করছেন, ইশরাকের শপথ গ্রহণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তাঁদের দাবি, শুরু থেকেই সময়ক্ষেপণ ও চিঠি চালাচালির মাধ্যমে শপথ প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
ডিএসসিসির এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, “আজ যদি উপদেষ্টা চান, কাল সকালেই শপথ হয়ে যেতে পারে। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করছেন।”
নাগরিক দুর্ভোগ
নগর ভবন বন্ধ থাকায় নাগরিক সেবা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গোপীবাগ থেকে আসা এক বাসিন্দা বলেন, “মেয়রের জন্য আন্দোলন হতেই পারে, কিন্তু জনগণের অফিস তো বন্ধ রাখা যায় না!”
পরিচ্ছন্নতা বিভাগের এক কর্মচারী জানান, “আমরা শহর পরিষ্কার করি, জানি কে কাজ করতে পারে। আমরা ইশরাক ভাইকেই মেয়র হিসেবে চাই।”
আজ বিকেলে ইশরাকের পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে রাজধানীর নাগরিক সেবা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এখন নজর দেওয়া হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে—শপথ বিলম্বিত থাকবে, নাকি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে আদালতের রায়।