ইরানে বসবাসকারী লাখ লাখ আফগান অভিবাসী ও শরণার্থীকে দেশ ছাড়তে শেষবারের মতো নির্দেশ দিয়েছে তেহরান। স্বেচ্ছায় ইরান ত্যাগের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হচ্ছে রোববার (৬ জুলাই)। এরপর অবৈধভাবে অবস্থানরত আফগান নাগরিকদের আটক করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে সতর্ক করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ।
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো, যখন ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাত এবং ইরানের পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পর দেশটিতে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, ইরান থেকে আফগানদের গণহারে ফেরত পাঠানো হলে আফগানিস্তান আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। যুদ্ধ, দারিদ্র্য এবং তালেবান শাসন থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা এই মানুষদের অনেকে কয়েক দশক ধরে ইরানে বসবাস করছেন।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, চলতি বছরের মার্চে ইরান সরকার একটি সময়সীমা ঘোষণা করে, যার মধ্যে যারা বৈধতা ছাড়া অবস্থান করছে, তাদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এরপর থেকে প্রায় সাত লাখ আফগান ইরান ছেড়েছে, শুধু জুন মাসেই ফিরে গেছে ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি।
ইরানে প্রায় ৪০ লাখ আফগান শরণার্থী ও অভিবাসী রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের অনেকে সেখানেই জন্মেছে এবং বেড়ে উঠেছে।
তেহরানে বসবাসকারী আফগান রেস্তোরাঁ মালিক বতৌল আকবরি আল জাজিরাকে বলেন, ইরানে এখন ‘অ্যান্টি-আফগান’ মনোভাব দেখা যাচ্ছে, যা আমাদের ভীষণভাবে কষ্ট দিচ্ছে। আমাদের অনেকের কাছে এটাই একমাত্র চেনা ঘর।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার আফগানকে ইরান থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যেখানে আগের গড় ছিল দিনে মাত্র দুই হাজার।
ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি বলেন, আমরা সবসময় অতিথিপরায়ণ ছিলাম। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার। অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশিদের অবশ্যই ফিরে যেতে হবে।
তেহরান থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক রেসুল সেরদার জানান, ইরানের চলমান অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং সামাজিক নানা সমস্যার জন্য আফগান অভিবাসীদের দায়ী করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের পর এসব অভিযোগ আরও জোরালোভাবে সামনে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা এবং রাজনৈতিক ভাষণগুলোর মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ইসরায়েল আফগানদের গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করছে।