ভারতের উপ-সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং দাবি করেছেন, সীমান্ত সংঘাতে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল কেবল পাকিস্তান নয়, পরোক্ষভাবে চীন ও তুরস্কও এই সংঘর্ষে জড়িত ছিল। তাঁর মতে, পাকিস্তান দৃশ্যমান হলেও চীন ও তুরস্ক তাদের পরোক্ষ সহায়তা দিয়েছে।
গত শুক্রবার ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (FICCI) আয়োজিত ‘নিউ এজ মিলিটারি টেকনোলজিস’ প্রোগ্রামে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “সীমান্তে আমরা একদিকে পাকিস্তানকে দেখেছি, কিন্তু চীন তাদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে এবং সেগুলো পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে পাকিস্তানকে। তুরস্কও প্রশিক্ষণ ও ড্রোন সহায়তা দিয়ে সম্পৃক্ত ছিল।”
রাহুল সিং বলেন, পাকিস্তান যে সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে, তার ৮১ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। “চীন পুরোনো প্রবাদ মেনে চলেছে— ধার করা ছুরি দিয়ে হত্যা করো। তারা সরাসরি সংঘর্ষে না গিয়ে পাকিস্তানকে ব্যবহার করেছে ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য।”
তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, পাকিস্তান সংঘর্ষের সময় চীনের স্যাটেলাইট ডেটার মাধ্যমে ভারতের সেনা চলাচল ও প্রস্তুতি সম্পর্কে অবগত ছিল, যা প্রমাণ করে কিভাবে চীন “লাইভ ইনপুট” দিচ্ছিল পাকিস্তানকে।
অপারেশন সিন্দুর ও সাপ্লাই চেইনের ব্যর্থতা
‘অপারেশন সিন্দুর’ থেকে ভারতের শিক্ষা নিয়ে তিনি বলেন, “সঠিক সময়মতো সরঞ্জাম না পাওয়ায় অনেক অপারেশন সফল হয়নি। আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত বিদেশ নির্ভরতা থাকায় ভবিষ্যতেও এমন পরিস্থিতি ঘটতে পারে।”
তিনি ইসরায়েলের “আয়রন ডোম” ব্যবস্থার উদাহরণ টেনে বলেন, ভারতের মতো বড় দেশে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করতে হবে— ব্যয়বহুল আমদানি নয়, স্থানীয় উৎপাদনই হবে চাবিকাঠি।
চীন-তুরস্কের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা
ভারতীয় কংগ্রেস এই বক্তব্যকে ঘিরে কেন্দ্র সরকারের সমালোচনা করে বলেছে, “যে চীন লাদাখে আগ্রাসন চালিয়ে স্থিতাবস্থা ভেঙে দিয়েছিল, সেই দেশকে মোদি সরকার ক্লিনচিট দিয়েছিল।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের স্বার্থে পাকিস্তানকে ব্যবহার করা দীর্ঘমেয়াদি কৌশল, কিন্তু তুরস্কের ভূমিকা ছিল মূলত রাজনৈতিক এবং ইসলামিক সংহতির প্রতীক হিসেবেই।
ভবিষ্যতের প্রস্তুতি ও সতর্কবার্তা
লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিং বলেন, “পরবর্তী সংঘর্ষে জনবহুল এলাকাও লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। তাই শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স, কাউন্টার-ড্রোন সিস্টেম ও অভ্যন্তরীণ সরবরাহ চেইন নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।”
তিনি বলেন, “আমাদের সামরিক পরিকল্পনায় প্রশাসনিক দুর্বলতা যেন বাধা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে কৌশলগত এবং প্রযুক্তিনির্ভর— যেখানে গতি, তথ্য ও সিদ্ধান্তের সমন্বয় জরুরি।”