জাপানে শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবই নিয়েই ব্যস্ত থাকে না, স্কুলের মেঝে ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে টয়লেট পরিষ্কার করাও তাদের দৈনন্দিন রুটিনের অংশ। অনেকের কাছেই এটি অবাক করা বিষয় হতে পারে, বিশেষ করে যেসব দেশে এসব কাজের জন্য নিয়োজিত থাকেন আলাদা পরিচ্ছন্নতাকর্মী। কিন্তু জাপানের কাছে এটি শুধুই একটি কাজ নয়—এটি একটি শিক্ষা।
জাপানি শিক্ষাব্যবস্থায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেখানো হয় দায়িত্ব, শৃঙ্খলা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অংশ হিসেবে। স্কুলে রয়েছে একটি নির্দিষ্ট দায়িত্ববণ্টন পদ্ধতি, যাকে বলা হয় ‘টোবান কাটসুডো’। এর আওতায় শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট শিডিউল অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষ, হলওয়ে, এমনকি টয়লেট পরিষ্কার করে।
পরিচ্ছন্নতা শুধু বাইরের নয়, ভিতরেরও
জাপানি সংস্কৃতিতে পরিচ্ছন্নতা শুধু বাহ্যিক নয়, এটি আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বিশুদ্ধতার প্রতীক। দেশটির অন্যতম প্রাচীন ধর্ম শিন্তোবাদে বিশ্বাস করা হয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই পবিত্রতার মূল। তাই ছোটবেলা থেকেই এই চর্চা শেখানো হয়।
ছোট থেকেই দায়িত্ববোধের শিক্ষা
শিক্ষার্থীদের নিজেদের ব্যবহৃত জায়গা নিজেরা পরিষ্কার করতে শেখানো হয়, যাতে তাদের মধ্যে জন্ম নেয় দায়িত্ববোধ, মালিকানা ও জবাবদিহিতার মনোভাব। এই অভ্যাস তাদের ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়তা করে।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী নয়, সবাই সমান
জাপানের অনেক স্কুলেই নেই আলাদা পরিচ্ছন্নতাকর্মী। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে কাজ করেন, ফলে গড়ে ওঠে সমবায় মানসিকতা, বাড়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং শিখে নেয় সবাই মিলে কাজ করার মূল্য।
চরিত্র গঠন ও জীবন দক্ষতা
পরিচ্ছন্নতা চর্চা শিক্ষার্থীদের শেখায় সময় ব্যবস্থাপনা, ধৈর্য, নম্রতা এবং দলগত কাজের গুরুত্ব। তারা বোঝে ছোট কাজও মর্যাদার, যদি তা আন্তরিকভাবে করা হয়।
শিক্ষার ছাপ থাকে সারাজীবন
শিশু বয়সে শেখা এই অভ্যাসগুলো বড় হয়ে জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। এটি গড়ে তোলে একজন সচেতন নাগরিক, যিনি নিজের পাশাপাশি আশপাশের পরিবেশকেও গুরুত্ব দেন এবং অন্যদের কাজকে সম্মান করতে শেখেন।
জাপানের এই শিক্ষা ব্যবস্থা কেবল শিক্ষার্থীদের পরিচ্ছন্ন রাখে না, বরং গড়ে তোলে শৃঙ্খলিত, দায়িত্বশীল ও সম্মানবোধসম্পন্ন ভবিষ্যৎ নাগরিক।