জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকারের ভূমিকা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এই ইস্যুতে সরকারের জবাবদিহিতা দাবি করেন ও হুঁশিয়ার করে বলেন—সরকার যদি নিজ উদ্যোগে এগিয়ে না আসে, তবে জনগণ ও অন্যান্য পক্ষ নিয়ে তারাই উদ্যোগ নেবেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র একটি জাতীয় দলিল, যা ‘জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের’ প্রেক্ষাপট, শহীদদের অবদান ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তৈরি হওয়া উচিত। তিনি জানান, এ ঘোষণাপত্র ভবিষ্যতে আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি পাবে বলেই ছাত্র নেতৃত্ব ভেবেছিল।
তিনি দাবি করেন, গত ৩১ ডিসেম্বর ছাত্র নেতৃত্ব নিজেরা ঘোষণাপত্র দিতে চাইলেও সরকারিভাবে তা প্রকাশের আশ্বাসে তারা সরে এসেছিল। পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে সব দল ও পক্ষের কাছ থেকে খসড়া ঘোষণাপত্র চাওয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও একটি খসড়া দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল—সব প্রস্তাব একত্র করে একটি সম্মিলিত দলিল তৈরি করা।
তবে সরকার দুইবার সময় দিলেও প্রতিশ্রুতি পালন করেনি, কেন করেনি সে ব্যাখ্যাও দেয়নি বলে জানান নাহিদ। তিনি বলেন, “আমরা চাই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ঘোষণাপত্র জারি হোক, যা সংবিধানে যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি বহন করবে।”
তিনি আরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “সরকার যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়, আমরা বসে থাকব না। আমরা আমাদের ইশতেহার প্রকাশ করব, অন্য পক্ষগুলোকেও আহ্বান জানাবো তারা যেন তাদের দলিল তৈরি করে। সম্মিলিতভাবে একটি চূড়ান্ত দলিল সরকারকে দিতে বাধ্য করা হবে।”
নাহিদ ইসলাম জানান, জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে। এছাড়া ‘জুলাই সনদ’-এ থাকবে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা। সংবিধানের কোন কোন জায়গায় পরিবর্তন দরকার তা নিয়েও থাকবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের দলিল। বাস্তবায়ন হতে পারে গণভোট, গণপরিষদ কিংবা সংসদীয় সংশোধনের মাধ্যমে। তিনি বলেন, “পরবর্তী সরকার বাধ্য থাকবে এই সনদের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে।”
তিনি জানান, জুলাই ও আগস্টের মধ্যে ঘোষণাপত্র ও সনদ—উভয়ই প্রকাশ করা সম্ভব। কোনো পক্ষ দলীয় স্বার্থে ঐকমত্য বাধাগ্রস্ত করলে, সরকারের উচিত হবে জনগণ ও অন্য পক্ষ নিয়ে এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা।
শেষে নাহিদ লেখেন, “আমরা চাই ৫ আগস্টের মধ্যে, অর্থাৎ ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যেই ঘোষণাপত্র ও সনদ চূড়ান্ত হোক। সরকার ও সব পক্ষকে ছাড় দিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।”
তিনি সবাইকে মনে করিয়ে দিয়ে লেখেন, “আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে আমাদের ‘জুলাই পদযাত্রা’। পথে প্রান্তরে কথা হবে আপনাদের সঙ্গে। দেশ গড়তে এই পথে আপনাদের স্বাগতম।”