শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা দুই ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এনসিপি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “তাঁরা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারে গেছেন। কেউ যদি রাজনীতি বা নির্বাচন করতে চায়, তাহলে সরকারে থেকে তা সম্ভব নয়। তখন নিজ উদ্যোগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু তাঁদের এনসিপির সঙ্গে সংযুক্ত করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যা আমরা প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা করছি।”
বিচার সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশের আহ্বান
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্বে থেকেই রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সংকট সমাধানের পথে এগোবেন বলে আশা প্রকাশ করেন নাহিদ। তিনি বলেন, “জুলাই মাসের মধ্যে বিচার সংস্কার, নির্বাচন ও রাজনৈতিক রোডম্যাপ একত্রে প্রকাশ করা উচিত। এতে রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে।”
নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের দায় নিতে চান না ইউনূস
নাহিদ ইসলাম জানান, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেছেন, চাপ প্রয়োগ করে একটি ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন’-এর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। এর দায়ভার তিনি নিতে চান না। আমি তাঁকে বলেছি, তাঁকে দায়িত্বে থাকতে হবে, কারণ তাঁর প্রতি জনগণের প্রত্যাশা রয়েছে।”
সেনাবাহিনীর কাজ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ বলেন, “সেনাবাহিনী দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া তাদের কাজ নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ তাদের দায়িত্বের বাইরে।”
তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী যে ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে, তা আগে প্রকাশ করা হলে অনেক বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার এড়ানো যেত।
অনৈক্যের জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ
দেশে চলমান রাজনৈতিক অনৈক্যের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “বিএনপি বরাবরই নির্বাচনের কথা বলেছে। তবে শুধুমাত্র নির্বাচনই গণ-অভ্যুত্থানের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা নয়। দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক ঐক্য জরুরি।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আওয়ামী আমলের নির্বাচনগুলোকে বৈধতা দেওয়ার জন্য আদালতের মাধ্যমে প্রচেষ্টা চলছে, যা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। বরং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত।”
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন
নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা ও আস্থা হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেন এনসিপি আহ্বায়ক। তাঁর মতে, “এই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা সম্ভব নয়। তাদের হয় আস্থার জায়গায় ফিরতে হবে, না হলে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।”
৫ বছরের ক্যাম্পেইনের সঙ্গে এনসিপির সংশ্লিষ্টতা নেই
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে—এই দাবি বা ক্যাম্পেইনের সঙ্গে এনসিপির কোনো দলগত সংযুক্তি নেই। সরকার তার কার্যকারিতার ভিত্তিতেই সময় পাবে।”
তিনি আরও বলেন, রিলিফ করিডর বা মানবিক করিডার নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্তের আগে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদীব ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহসহ দলের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।