রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মোবাইল ছিনতাই ও পুলিশের দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন সাংবাদিক আহমাদ ওয়াদুদ।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদস্যের আচরণে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। শুক্রবার (২৫ জুলাই) বাংলাদেশ পুলিশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
ওই পোস্টে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, আহমাদ ওয়াদুদের ফেসবুক স্ট্যাটাস “মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের সাথে এক ঘণ্টা” আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
ভিকটিমের ফেসবুক স্ট্যাটাসে বর্ণিত অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট চারজন পুলিশ সদস্য (এসআই জসিম, এসআই আনারুল, কনস্টেবল নুরুন্নবী ও কনস্টেবল মাজেদুল ইসলাম)-কে ইতোমধ্যে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যের অসদাচরনের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।
ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয়েছে এবং তিনজন আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে ছিনতাইয়ের ঘটনা এবং পুলিশের গাফিলতির অফিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন মোবাইল মালিক আহমাদ ওয়াদুদ।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, আজ (বৃহস্পতিবার) রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরে আমার সঙ্গে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা আমার একটি মোবাইল ফোন এবং কিছু টাকা-পয়সাসহ মানিব্যাগ নিয়ে যায়। আমাকে চাপাতি দিয়ে কিছু আঘাত করে। সৌভাগ্যবশত আঘাত গুরুতর নয়।
আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী ছিলেন। একটু দূরে থাকায় তিনি নিরাপদ ছিলেন।
ঘটনাস্থল থেকে মোহাম্মদপুর থানার অবস্থান ৩ মিনিট হাঁটার দূরত্বে। আমি এবং আমার স্ত্রী ঘটনার ৫ মিনিটের মধ্যে থানায় যাই। সোজা ডিউটি অফিসারের রুমে গিয়ে বলি, ৫ মিনিট আগে তিন রাস্তার মোড়ে আমার সঙ্গে একটি ছিনতাই হয়েছে।
তারা আমাকে বললেন, একটু অপেক্ষা করেন, দেখছি। ডিউটি অফিসারের নাম এসআই জসিম। তার পাশে সাদা পোশাকে একজন পুলিশ সদস্য কাগজে অন্য একজনের অভিযোগ লিখছেন। সাদা পোশাকের ওই পুলিশ সদস্য আমার দিকে আঙুল তাক করে উগ্রভাবে বলেন, আপনার শার্টের বোতাম লাগান। আমি তখনই খেয়াল করলাম, ছিনতাইকারীদের আঘাতের সময় আমার একটি বোতাম খুলে গিয়েছিল। আমি ওই অফিসারের কথায় আহত হলেও কোনো ঝামেলায় না গিয়ে ‘সরি’ বলে বোতামটি লাগিয়ে নিলাম। এরপর তিনি আমাকে আমার সবগুলো বোতাম লাগাতে বললেন। আমার তখন শুধু টাই-বাটন, অর্থাৎ একদম গলার সঙ্গে থাকা বোতামটি খোলা ছিল, যেটা সাধারণত আমরা কখনো লাগাই না। আমি বললাম, প্লিজ আমার অভিযোগটি নিন।
তারা বললেন, অভিযোগ লেখার লোক নেই। আমি তাদের বললাম, আমি নিজেই লিখে দিচ্ছি। আমাকে একটি কাগজ দিন। তারা কয়েক মিনিট পর আমাকে একটি সাদা কাগজ দিলেন। আমি একটি কলম দিতে অনুরোধ করলাম। অফিসার বললেন, আমাদের এক্সট্রা কলম নেই। অথচ সেখানে অনেক কলম পড়ে ছিল।
ভুক্তভোগী আরো লিখেছেন, যাহোক আমার স্ত্রী নিজের ব্যাগ খুঁজে আমাকে একটি কলম দিলেন। আমি সেটা দিয়ে আমার অভিযোগ লিখলাম। ডিউটি অফিসার আমার অভিযোগের কোনো কপি দিলেন না। শুধু আমাকে একটি ফোন নম্বর দিয়ে বললেন, এটা এএসআই আনারুলের নম্বর। উনি এখন বোধহয় হাউজিংয়ে ব্যস্ত আছেন। আপনি ফোনে উনার সঙ্গে কথা বলেন।
আমি তখন তাকে বিনীতভাবে বললাম, আমার মনে হয় এখন ঘটনাস্থলে গেলে ওদের পাওয়া যাবে। দয়া করে এমন কাউকে বলুন, যিনি আমাদের সঙ্গে এখন সেখানে যেতে পারবেন। এসআই জসিম আমার কথায় প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বললেন, এটা সম্ভব নয়। ওই এলাকায় ইনি ছাড়া আর কেউ যেতে পারবে না। এটা তার এলাকা। আপনি এখান থেকে এখন চলে যান। ওখানে গিয়ে ছিনতাইকারীদের পাবেন না।
আমি বললাম, আমার ধারণা ওরা ওখানে এখনো আছে। তবে এসআই জসিম বললেন, আপনার কমন সেন্স নাই? ছিনতাইকারী আপনার-আমার জন্য বসে থাকবে নাকি? আমি তবু তাকে অনুরোধ করলাম, কাছেই যেহেতু, যেন একবার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়।
আমি সেখান থেকে বের হয়ে ওসি সাহেবের রুমে যাই। ওসি ইফতেখার হাসান সাদা পোশাকে ছিলেন। আমি তাকে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি বললাম। তিনি বললেন, ‘আমি ওসি হয়েও এই কম দামি ফোন ব্যবহার করি, আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই!’
আমি তার কথায় কোনো উত্তর দিলাম না। আমি তাকে অনুরোধ করলাম, যেন এখনই আমার ছিনতাইয়ের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেন। তিনি পূর্বোক্ত এএসআই আনারুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে তার জন্য বাসস্ট্যান্ড মোড়ে অপেক্ষা করতে বলেন।
আমি বাসস্ট্যান্ডসহ মোট তিনটি পয়েন্ট ঘুরে এএসআই আনারুলের সঙ্গে দেখা করি। তার সঙ্গে আরও সাত-আটজন পুলিশ সদস্য ছিল। আনারুল সাহেব আমার কথা শুনে বলেন, চলেন আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আমি তার সঙ্গে গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে যাই। এর মধ্যে প্রায় ৪০ মিনিট পার হয়ে গেছে। তবে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আমি ওই ছিনতাইকারীদের সেখানেই বসে থাকতে দেখি। আমি দূর থেকে তাদের দেখিয়ে দিলেও এএসআই আনারুল সেখানে না গিয়ে একটু দূরে অন্য একটি জায়গায় গিয়ে কিছু লোকের সঙ্গে কথোপকথন করেন।
মিনিটদুয়েক পর তিনি ফিরে এলে আমি এএসআই আনারুলকে আবার ওই সন্ত্রাসীদের দেখিয়ে দিই। তবে আনারুল সেখানে না গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সন্ত্রাসীরাও পুলিশসহ আমাকে দেখে আস্তে আস্তে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে থাকে। আমি অবাক হয়ে এএসআই আনারুলের দিকে তাকিয়ে থাকি!
আজ দুপুরে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান গণমাধ্যমকে জানান, সন্দেহজনকভাবে তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।