যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া মেক্সিকান টমেটোর ওপর ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, নতুন এই শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে টমেটো ও টমেটোভিত্তিক পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে।
মূলত, মেক্সিকোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের একটি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরই এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসে।
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, পুরনো ওই চুক্তিটি মার্কিন কৃষকদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। মেক্সিকো ন্যূনতম দামে টমেটো রপ্তানি করে মার্কিন কৃষকদের প্রতিযোগিতার বাইরে ঠেলে দিচ্ছে।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এক বিবৃতিতে বলেন, “টমেটোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্যে আমাদের চাষিরা দীর্ঘদিন ধরেই অন্যায্য দামের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন।”
তবে মেক্সিকো এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, টমেটোর মান ও স্বাদই জনপ্রিয়তার মূল কারণ, দাম নয়।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, শুল্ক আরোপের ফলে সুপারমার্কেট, রেস্টুরেন্ট ও ফাস্ট ফুড চেইনগুলোতে টমেটোভিত্তিক পণ্যের দাম বাড়তে পারে। বিশেষ করে পিজ্জার সস ও সালসার মতো পণ্যে এর প্রভাব বেশি পড়বে।
মেক্সিকোর অর্থনীতি ও কৃষি মন্ত্রণালয় এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, “মার্কিন বাজারে যে পরিমাণ টমেটো রপ্তানি হয়, তা দেখে বোঝা যায়—মেক্সিকান টমেটোর বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন।”
ফ্লোরিডা টমেটো এক্সচেঞ্জ নামের একটি সংস্থা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত টমেটোর প্রায় ৭০ শতাংশই আসে মেক্সিকো থেকে।
যারা শুল্ক আরোপের পক্ষে, তারা বলছেন—এতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত টমেটোর চাহিদা বাড়বে, ফলে দেশীয় কৃষকরা লাভবান হবেন।
মেক্সিকো জানিয়েছে, তারা নতুন চুক্তির বিষয়ে আলোচনায় আগ্রহী। একইসঙ্গে তারা বিকল্প বাজার খুঁজে বের করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সাল থেকেই মার্কিন কৃষকরা অভিযোগ করে আসছেন, মেক্সিকান টমেটো কম দামে বাজারে আসায় তারা বিপাকে পড়ছেন। তখন থেকেই অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক দিয়ে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছিল।
পরবর্তীতে উভয় দেশের মধ্যে পাঁচটি চুক্তি হয়, যার সর্বশেষটি হয় ২০১৯ সালে। সেই চুক্তি থেকেও এবার সরে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে মেক্সিকোর সব পণ্যের ওপর ৩০% শুল্ক আরোপ করা হবে—যদি না তারা মাদক পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে চীন, ব্রাজিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে।