ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন, যার ফলে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন।
প্রসিকিউশনের দাবি—তার আদেশেই দমন অভিযানে নিহতদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়, আহতদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়। যদিও শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তার ১৫ বছরের শাসনের অবসানে জুলাই ২০২৪-এ শুরু হওয়া আন্দোলনে আনুমানিক ১,৪০০ জন প্রাণ হারান। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন দ্রুতই শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে দেশজুড়ে রূপ নেয়।
৫ আগস্ট, গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে দেশ ত্যাগ করেন, আর বিক্ষুব্ধ জনতা দখল করে তার সরকারি বাসভবন। ওই দিন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।
প্রসিকিউটর ময়নুল করিম জানান, ফোন রেকর্ড, ভিডিও প্রমাণ ও সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে যা শেখ হাসিনাকে সরাসরি হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত করে। তার ভাষায়,
“আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারব যে তিনি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য।”
আদালত ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা বর্তমানে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
অন্যদিকে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে বলেছেন, শেখ হাসিনার নির্দেশেই ড্রোন ও হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালানো হয়েছিল।
প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন,
“শেখ হাসিনা ১,৪০০ বার মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। অন্তত একটি মৃত্যুদণ্ডই ন্যায্য হবে।”
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ১৯ অক্টোবর থেকে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবেন। রায় ঘোষণা হতে পারে নভেম্বরের মধ্যভাগে। দোষ প্রমাণিত হলে শেখ হাসিনার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্তও হতে পারে।
শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই আদালত অবমাননায় ছয় মাসের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত, পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাও চলছে।
অন্যদিকে, তার ভাতিজি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক-এর বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। অভিযোগ, তিনি তার খালার প্রভাব ব্যবহার করে নিজের পরিবারের জন্য জমি বরাদ্দে সুবিধা নিয়েছিলেন।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এতে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি এখন ফেভারিট বলে গণমাধ্যম উল্লেখ করেছে। তবে আওয়ামী লীগকে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম ও নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
