প্রেমিকের হাত ধরে স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার পর সামাজিক চাপ, হাসি-ঠাট্টা ও কটুকথার মুখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন মুন্সিগঞ্জের কামাল হোসেন (৩৯)। তবে সব দুঃখ পেছনে ফেলে নতুন করে জীবন শুরু করছেন তিনি। বিয়ে করেছেন একই গ্রামের তরুণী নূপুর আক্তারকে (২৪)। আর এই বিয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে নববধূকে এনেছেন হেলিকপ্টারে চড়িয়ে—এ নিয়ে পুরো গ্রামে ছড়িয়েছে উৎসবের আমেজ।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কাঠাদিয়া গ্রামে হেলিকপ্টারে নেমে আসেন নববধূ নূপুর। গ্রামের মানুষ ভিড় করেন সেই দৃশ্য দেখতে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কাঠাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন পেশায় একজন বেসরকারি সার্ভেয়ার ও জমির ব্যবসায়ী। প্রায় ১০ বছর আগে বিয়ে করেন সাথী আক্তারকে (২৮)। তাঁদের সংসারে ছিল দুই কন্যা—একজনের বয়স ৮ বছর, অপরজনের ২ বছর।
কিন্তু সম্প্রতি সাথীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে মুন্সিগঞ্জ শহরের একটি বিপণিবিতানে কর্মরত বিবাহিত যুবক মুন্নার। গত ১০ আগস্ট প্রেমিকের সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান সাথী। যাওয়ার সময় সঙ্গে নিয়ে যান দুই সন্তান, ৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এরপর সাথী কামালকে তালাক দেন।
এই কঠিন সময়ে কামালের পাশে ছিলেন গ্রামের তরুণী নূপুর আক্তার। দুজনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, আর সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেন নতুন জীবন শুরু করার। সেই বিয়ের দিনেই হেলিকপ্টারে নববধূকে বাড়ি আনেন কামাল। নতুন জীবন শুরুর আনন্দ আর হেলিকপ্টার দেখতে ভিড় করেন শত শত গ্রামবাসী।
কামাল বলেন, ‘একটা সময় ভেবেছিলাম এ জীবন আর রাখব না। ঠিক সে সময় ভালোবাসা নিয়ে আমার জীবনে এসেছে নূপুর ও তাঁর পরিবারের লোকজন। তাই আমি দ্বিতীয়বার বিয়েতে রাজি হই। প্রথম স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার আগে ভেবেছিলাম এবার বিবাহবার্ষিকীতে হেলিকপ্টারে করে ঘুরব। যেহেতু সে পালিয়ে গেছে, সব জেনেশুনে নূপুর বিয়েতে রাজি হয়েছে, তার ভালো মানসিকতাকে সম্মান দেখাতে বিয়ে করে হেলিকপ্টারে এনেছি।’
নূপুর আক্তার বলেন, ‘কামাল একজন ভালো মনের মানুষ। তার সঙ্গে একটা অন্যায় হয়েছে, অবিচার হয়েছে। এটা কখনো যেন কারও সঙ্গে না হয়। সবকিছু জেনেশুনে কামালের মতো একজন ভালো মানুষের সঙ্গে আমার পরিবার বিয়ে দিতে সম্মত হয়। আমিও তাতে খুশি মনে রাজি হই।’
নূপুরের মামা রিমন দেওয়ান বলেন, ‘আমরা কামালকে ছোট থেকে চিনি। তিনি ভালো মানুষ। এ কারণেই আমরা নূপুরকে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছি। গ্রামের মানুষও বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।’