অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরশাসনের পথে ফিরবে না এবং দেশের গণতন্ত্র আর হুমকির মুখে পড়বে না।
শুক্রবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস আরও বলেন, “দল-মত-নির্বিশেষে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই গণতন্ত্র ও সংস্কার কার্যক্রমকে টেকসইভাবে এগিয়ে নেওয়া হবে।”
জনগণের আত্মত্যাগে অর্জিত ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াকে আর কোনো শক্তি বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
প্রধান উপদেষ্টা স্মরণ করিয়ে দেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম। কিন্তু গত পাঁচ দশকে সেই অধিকার বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে আর জনগণকে বারবার সেই অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আত্মত্যাগ করতে হয়েছে।
ড. ইউনূস জানান, গত বছর ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে’ তরুণসমাজ স্বৈরাচারকে পরাজিত করেছিল।
সেই অভ্যুত্থান বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের নতুন পথ খুলে দিয়েছে এবং সে দায়িত্বই জনগণ তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছেন। ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ড. ইউনূস জানান, নির্বাহী আদেশে সংস্কার চালানো সম্ভব হলেও তাঁর সরকার বেছে নিয়েছে কঠিন পথ—একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রক্রিয়া। এ জন্য বিচার বিভাগ, শাসনব্যবস্থা, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, দুর্নীতি দমন, নারী অধিকারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে ১১টি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতেই ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল ও জোটকে নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায়, গত জুলাই মাসে সব রাজনৈতিক দল একযোগে ‘জুলাই ঘোষণা’-র মাধ্যমে সংস্কার কার্যক্রমে সময়বদ্ধ অঙ্গীকার প্রকাশ করে।
ড. ইউনূস বলেন, এই ঐকান্তিক অঙ্গীকারের ফলে আগামী নির্বাচনে যে দলই জনগণের সমর্থন লাভ করুক না কেন, গৃহীত সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না।