২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির এক ভোরে ঘটে যায় ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ সাইবার হামলা। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপদ নেটওয়ার্কে হানা দিয়ে ১০০ কোটি ডলার হাতানোর পরিকল্পনা করে আন্তর্জাতিক হ্যাকার চক্র। শেষ পর্যন্ত তারা ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার লুট করতে সফল হলেও, আরও বড় বিপর্যয় রোধ হয়ে যায় এক অদ্ভুত কারণে—একটি প্রিন্টারের ছোট্ট ত্রুটি।
আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এই ঘটনাকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম দুঃসাহসী ডিজিটাল ডাকাতি হিসেবে। তদন্তে উঠে আসে, এই ভয়ঙ্কর হামলার নেপথ্যে ছিল উত্তর কোরিয়ার কুখ্যাত ল্যাজারাস গ্রুপ, যাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে বলে অভিযোগ।
হ্যাকাররা এক বছর আগে থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে প্রতিটি লেনদেনের খুঁটিনাটি আয়ত্তে নেয়। সময়ের ফাঁক ও আন্তর্জাতিক ছুটির দিনকে কাজে লাগিয়ে তারা মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভে থাকা বাংলাদেশের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নিতে শুরু করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা ছিল, যেখানে টাকা স্থানান্তর করা হয় এবং ক্যাসিনো ও দাতব্য সংস্থার নামে তোলা হয় বিপুল অর্থ।
তবে শেষ মুহূর্তে একটি লেনদেনে “Jupiter” শব্দ থাকায় সন্দেহ তৈরি হয় এবং স্বয়ংক্রিয় সতর্কবার্তা বাজতে থাকে ফেডের সিস্টেমে। এর ফলে ১০০ কোটি ডলারের লেনদেন আটকে যায়। শেষ পর্যন্ত পাঁচটি লেনদেন সফল হলেও প্রায় ২ কোটি ডলার ফেরত পাওয়া সম্ভব হয়।
মার্কিন এফবিআইয়ের দাবি, এই সাইবার হামলা ছিল উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত পরিকল্পনার অংশ। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন, পার্ক জিন হিয়ক, যিনি উত্তর কোরিয়ার সফটওয়্যার কোম্পানি Chosun Expo-তে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক আন্তর্জাতিক অপরাধ মামলা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ডাকাতি শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছিল—ডিজিটাল যুগে একটি দেশের অর্থনীতি কত সহজে নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে।