দীর্ঘ ২৩ মাস ধরে গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। হামাস উৎখাত ও জিম্মি মুক্তির নামে চলতে থাকা এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবশেষে পশ্চিমা বিশ্বে প্রতিবাদের সুর উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান উপেক্ষা করে প্রথমে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর কিছু ঘণ্টার মধ্যেই দলে যোগ দেয় ইউরোপীয় দেশ পর্তুগাল।
এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নেতানিয়াহু সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে মিত্রদের এমন ‘অপ্রীতিকর সিদ্ধান্তের’ কড়া জবাব দেওয়া হবে। ট্রাম্পও স্বীকৃতিকে ‘নাটকীয় প্রদর্শনী’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার কেবল গুরুতর কূটনীতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা।
মার্কিন রিপাবলিকান নেতারাও এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। ২৫ জন আইনপ্রণেতা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে চিঠি দিয়ে এই স্বীকৃতিকে ‘হঠকারী’ বলে উল্লেখ করেন। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন কয়েকজন সিনেটর।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর নেতারা জোর দিয়ে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যেই তাদের এই সিদ্ধান্ত। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, “শান্তি ছাড়া নিরাপদ ভবিষ্যৎ নেই।” একইসঙ্গে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি প্রতিশ্রুতি দেন, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয় রাষ্ট্রের জন্য শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়তে তারা কাজ করবেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে আরও কয়েকটি দেশ—ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, অ্যান্ডোরা ও সান মারিনো—ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র আরও একা হয়ে পড়বে বলে বিশ্লেষকদের মত।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কঠোর ভাষায় বলেছেন, “জর্ডান নদীর পশ্চিমে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে না।” এদিকে অতি-ডানপন্থী নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার দাবি তুলেছেন এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ‘সম্পূর্ণভাবে চূর্ণ’ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বর্তমানে জাতিসংঘের তিন-চতুর্থাংশ সদস্য রাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। গত বছর আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ে একই ধরনের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেয়।