ওমানের মাস্কটে ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের বৈঠক থেকেই যেন শুরু নতুন এক উত্তেজনা। সেখানে সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রসঙ্গ তুলতেই জয়শংকর স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এখনই এ নিয়ে কথা বলা মানেই পাকিস্তানের সুরে সুর মেলানো। এরপরই দিল্লি সতর্ক করে জানায়—ঢাকা যেন সন্ত্রাসবাদকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন না করে।

এরপর থেকেই দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করে। কয়েক মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একে অপরের আরও কাছাকাছি আসে। প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, সংস্কৃতি—প্রায় সব খাতেই সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। পাকিস্তান থেকে চাল আমদানি, সরাসরি ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের জন্য বৃত্তি ও প্রশিক্ষণ—সব মিলিয়ে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ যেন এক নতুন উচ্চতায়।

সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইশহাক দার সংবেদনশীল ইস্যু ‘একাত্তর গণহত্যা’ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে বিএনপি, জামায়াত ও নতুন দল এনসিপির নেতাদের সঙ্গেও দেখা করেন। ভারত এটাকে শুধু কূটনৈতিক উদ্যোগ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবেই দেখছে।

দিল্লির শীর্ষ মহলে উদ্বেগ বাড়ছে কয়েকটি কারণে। প্রথমত, পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বাংলাদেশ সফর। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা ঝুঁকি—বিশেষত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে আশঙ্কা। তৃতীয়ত, সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক দিক থেকে পাকিস্তানের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষার্থী বৃত্তি বা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পাকিস্তান নতুন প্রজন্মকে রবীন্দ্রনাথ নয়, বরং জিন্নাহ ও ইকবালের চিন্তাধারায় দীক্ষিত করতে চাইছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান পর্যন্ত প্রকাশ্যে বলেন—বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ তৈরি হচ্ছে, যা ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

ভূরাজনৈতিক দিক থেকেও এই সমীকরণকে হালকাভাবে নিচ্ছে না দিল্লি। বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি ও ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি এই ঘনিষ্ঠতায় ভূমিকা রাখছে। ফলে ভারতকে একদিকে পশ্চিমে পাকিস্তান, উত্তরে চীন এবং পূর্বে বাংলাদেশ—এমন এক ত্রিমুখী চাপে পড়তে হতে পারে।

সবমিলিয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেলেও, দিল্লির কাছে এটি সরাসরি নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক স্বার্থের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version