নতুন শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য পাঠ্যবইয়ের মান নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
২০২৬ সাল থেকে প্রথমবারের মতো প্রতিটি বইয়ের ফর্মায় বাধ্যতামূলকভাবে ছাপানো থাকবে সংশ্লিষ্ট মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের নাম। এর ফলে বই বিতরণের পর কোনো সমস্যা ধরা পড়লে সহজেই দায়ী প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করা যাবে।
পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগে অনেক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান ‘ইনার চেঞ্জ’ নামে অনৈতিক পদ্ধতিতে মানহীন বই বাজারে সরবরাহ করত। এতে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাত নিম্নমানের বই, যা শিক্ষা ও শেখার অভিজ্ঞতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলত।
কাগজের মান বাড়াতে এনসিটিবি এনেছে বড় পরিবর্তন। এবার কাগজের ওজন বাড়ানো হয়েছে ৮২ জিএসএম থেকে ৮৫ জিএসএম-এ। বাস্টিং ফ্যাক্টর ১৬ থেকে উন্নীত করে ২০ করা হয়েছে। ব্যবহৃত হচ্ছে ১০০% প্রাকৃতিক পাল্প— বাদ দেওয়া হয়েছে কৃত্রিম ব্রাইটনার, যা চোখের ক্ষতি করত। ফলে দীর্ঘ সময় বই পড়লেও শিক্ষার্থীরা চোখের আরাম পাবেন।
প্রতিটি প্রেসে বসানো হবে সিসিটিভি ক্যামেরা, যাতে মুদ্রণ কার্যক্রম সরাসরি নজরদারিতে থাকে। একই সঙ্গে কাগজ পরীক্ষার জন্য দ্বৈত ল্যাব ব্যবস্থাও চালু হচ্ছে। এনসিটিবি জানাচ্ছে, এবার মনিটরিং হবে তিন ধাপে— সরেজমিন পরিদর্শন, অনলাইন ডাটা ট্র্যাকিং এবং সিসিটিভি নজরদারি।
তবে, নতুন মানদণ্ড ও কথিত ‘সিন্ডিকেট দর’-এর কারণে বই ছাপানোর খরচ বেড়েছে প্রায় ৩২৩ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যয় বাড়লেও বইয়ের মান উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য এটি জরুরি।
এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী জানান, “আমরা ধারাবাহিকভাবে মানোন্নয়নের পথে এগোচ্ছি। কাগজের মান, ছাপা ও শিক্ষার্থীদের চোখের স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”
২০২৬ সাল থেকে প্রতিটি বইয়ের ফর্মায় প্রিন্টারের নাম দেওয়া হবে, যা নিম্নমানের বইয়ের দায়ীদের সহজে চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।
