চলতি মাসে অন্তর্বর্তী সরকার এক বছরের পূর্ণতা ঘটিয়েছে। এ সময়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি টাঙানো নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। হঠাৎ করে বিদেশে বাংলাদেশের মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ আসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।
সূত্র জানায়, এই সিদ্ধান্ত এসেছে টেলিফোন নির্দেশনায়।
বিষয়টি নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ
অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টা বিদেশ সফরে গিয়ে একটি মিশনে রাষ্ট্রপতির ছবি টাঙানোর বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে, সংশ্লিষ্ট বিভাগ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয় বিদেশে থাকা সকল মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর।
সরকারি নির্দেশনা কার্যকর করতে সম্প্রতি সব মিশনকে নয়, কয়েকজন দূতকে সরাসরি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা অন্য মিশনপ্রধানদের জানিয়ে দেবেন।
গত শনিবার মধ্যরাত থেকে এই নির্দেশনার খবর প্রকাশিত হয়। রোববার (১৮ আগস্ট) পুরো দিন এটি ছিল টক অব দ্যা কান্ট্রি। তবে সরকার বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেননি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রোহিঙ্গা-বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্স বৈঠকের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়লেও পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম কোনো মন্তব্য করেননি। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
উপদেষ্টার বক্তব্য
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “আমিও আপনার মতো সংবাদে পড়েছি। যেহেতু আমি বিদেশি দূতাবাসে কাজ করি না, তাই প্রেক্ষিত বলতে পারছি না। সরকারি সিদ্ধান্ত হলে লিখিত কাগজপত্র থাকত।”
তিনি আরও বলেন, “এটার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। একটি ছবির সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক থাকা সম্ভব নয়।”
পটভূমি
সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ৮২টি মিশন ও উপমিশন রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর অনেক মিশন থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলা হয়। নতুন নির্দেশনার আগ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি মিশন সব ছবি সরিয়ে ফেলেছিল।
নতুন নির্দেশনার পর বাকি মিশন থেকেও রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো হয়েছে। ইউরোপের একটি মিশনে কর্মকর্তারা জানান, নির্দেশনা পাওয়ার পর শনিবার বিকেলে ছবি সরানো হয়।
বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী, সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে থাকা মিশনগুলোতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী বা বর্তমান রাষ্ট্রপতির ছবি ব্যবহার সংক্রান্ত কোনো আইন বা নির্দেশনা নেই।
২০০২ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি বিদেশে মিশনে টাঙানোর নির্দেশ দেয়। তবে ৫ আগস্টের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছবি টাঙানোর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি।
সরকারি দপ্তরের ব্যাখ্যা
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ ফেসবুকে লিখেছেন, “সরকারি দপ্তরে ছবি ব্যবহার শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার নিরুৎসাহিত করছে। কেউ কেউ নিজের দায়িত্বে ছবি ব্যবহার করেছে, তা সরানোর লিখিত নির্দেশনা নেই। তবুও বিষয়টি বাজারে বিতর্কিত করা হয়েছে।”
সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বলেন, “রাষ্ট্রপতির ছবি রাখা না রাখা পুরোপুরি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ধরনের নির্দেশ দিতে পারে না।”