আলাস্কা থেকে:
আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে আসন্ন ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক। আগামী ছয় দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় মুখোমুখি বসবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ না জানানোয় কিয়েভে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তাঁদের দেশ ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, তবে কোনো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বৈঠকের প্রেক্ষাপট
আলাস্কা বেছে নেওয়ার পেছনে প্রতীকী কারণও রয়েছে। ১৫৮ বছর আগে মাত্র ৭.২ মিলিয়ন ডলারে রাশিয়া এ অঞ্চল বিক্রি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রকে। এবার পুতিন সেখানে ‘শতাব্দীর সেরা ভূমি চুক্তি’ করতে চাইছেন—যাতে দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের অবশিষ্ট অঞ্চল রাশিয়ার দখলে যায়।
ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ প্রস্তাব দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইউক্রেন যেন ওই অঞ্চল ছেড়ে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ কিয়েভ ও ইউরোপীয় মিত্ররা বলছে, এটি কার্যত রাশিয়ার জয় নিশ্চিত করবে।
সামরিক পরিস্থিতি
এদিকে, দোনেৎস্কের পোকরোভস্ক ও কোস্তিয়ানতিনিভকা শহর প্রায় ঘিরে ফেলেছে রুশ সেনারা। জনবল বাঁচাতে ইউক্রেন হয়তো এসব শহর ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে। তবে ক্রামাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্ক ছাড়ার প্রশ্ন আরও জটিল, কারণ সেখানে হাজারো সাধারণ নাগরিক রয়েছে।
জেলেনস্কির ভূমি ছাড়তে অস্বীকৃতি জনগণের দীর্ঘস্থায়ী অবিশ্বাস ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারও প্রতিফলিত করে। সর্বোচ্চ সম্ভাব্য প্রাপ্তি হতে পারে সুমি ও খারকিভ সীমান্তের ক্ষুদ্র কিছু এলাকা ফেরত—যা কিয়েভের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় দেশগুলো আশঙ্কা করছে, যেন ১৯৩৮ সালের ব্যর্থ মিউনিখ চুক্তির পুনরাবৃত্তি না হয়। ভারত ও চীনও সম্প্রতি ক্রেমলিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, যা পুতিনকে বৈঠকে রাজি করাতে সহায়ক হতে পারে।
ট্রাম্প প্রকাশ্যে পুতিন সম্পর্কে অসন্তুষ্টি জানালেও, রাশিয়ার ওপর তার চাপ প্রয়োগের মনোভাব আগের মতোই নরম বলে মনে করছে বিশ্লেষকেরা।
উপসংহার
বর্তমান পরিস্থিতি রাশিয়ার জন্য বেশ অনুকূল—নিষেধাজ্ঞার হুমকি প্রায় নেই, ফ্রন্টলাইনে অগ্রগতি অব্যাহত, ও যুক্তরাষ্ট্রে বসে ইউক্রেন ছাড়া ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ মিলেছে। ফলে, অনেকের কাছে আসন্ন আলাস্কা বৈঠক কিয়েভের জন্য এক ধীরগতি পরাজয়ের পূর্বাভাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।