আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সম্প্রতি মালয়েশিয়া চালু করেছে ‘গ্র্যাজুয়েট পাস’ নামে এক বছরের জন্য কাজের ভিসা। গ্র্যাজুয়েট পাস করার পর স্পন্সর ছাড়াই দেশটিতে কাজের সুযোগ পাবেন ৩২টি দেশের শিক্ষার্থীরা। তবে এ তালিকায় বাংলাদেশকে রাখা হয়নি।
দেশটির এডুকেশন মালয়েশিয়া গ্লোবাল সার্ভিস (ইমএমজিএস) এর ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ইমিগ্রেশন বিভাগের ইস্যুকৃত একটি সোশ্যাল ভিজিট পাস, যা বহিরাগত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন (গ্র্যাজুয়েট) শেষ হওয়ার পর এককালীন ১২ মাস মালয়েশিয়ায় থেকে নির্ধারিত খাতে কাজ করার অনুমতি পাবেন। এই পাসের অন্যতম সুবিধা হলো, এতে কোনো নিয়োগদাতার স্পনসরশিপের প্রয়োজন হবে না।
তবে এই ভিসার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো—শিক্ষার্থীদের অবশ্যই মালয়েশিয়ার স্বীকৃত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি বা তদূর্ধ্ব পাঠ্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এই শর্ত প্রমাণের জন্য আবেদনকারীদের অবশ্যই সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইস্যুকৃত ‘লেটার অব কমপ্লিশন’ জমা দিতে হবে। এছাড়াও আবেদনকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের বৈধ স্টুডেন্ট ভিসা থাকতে হবে, যা কেবলমাত্র মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য।
৩২ দেশের শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ দিচ্ছে মালয়েশিয়া, নেই বাংলাদেশ
এই ভিসার অন্যান্য যোগ্যতাসমূহের মধ্যে রয়েছে—কমপক্ষে ১৮ মাসের মেয়াদসহ বৈধ পাসপোর্ট, হেলথ ইন্স্যুরেন্স এবং এমন একজন মালয়েশীয় নাগরিকের ব্যক্তিগত জামানত যিনি মাসিক অন্তত ১ হাজার ৫০০ রিঙ্গিত উপার্জন করেন। আবেদনকারীর বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় কোনো ফৌজদারি মামলা বা দণ্ড থাকলে তিনি এই সুবিধা পাবেন না বলে জানিয়েছে দেশটির সংশ্লিষ্ট ইউনিভার্সিটিগুলো।
তবে কোন কোন খাতে শিক্ষার্থীরা আবেদন করে কাজের সুযোগ পাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে উঠে এসেছে, তথ্যপ্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান ও গবেষণা, ফাইন্যান্স ও ইসলামিক ব্যাংকিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সাইবার সিকিউরিটি, বায়োটেকনোলজি, স্বাস্থ্যসেবা, ফার্মাসিউটিক্যালস, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, লজিস্টিকস, ডিজিটাল মার্কেটিং, মাইক্রো চিফ, মাইনিং ও ক্রিয়েটিভ মাল্টিমিডিয়া সহ বিভিন্ন সেক্টরে। এই সুযোগের মাধ্যমে দেশটির সরকার দেশের দক্ষ মানবসম্পদ বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিনির্ভর খাতগুলোতে বৈশ্বিক মেধাবীদের অন্তর্ভুক্ত করতে চায় বলে মনে করছেন অ্যাডমিশনে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
ইমএমজিএস ও ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া (আইআইইউএম) তাদের এক স্পেশাল বুলেটিনে জানিয়েছে, এই সুবিধাটি বর্তমানে ৩২টি দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
এদের মধ্যে রয়েছে; অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ওমান ও বাহরাইন।
৩২ দেশের শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ দিচ্ছে মালয়েশিয়া, নেই বাংলাদেশ
তাছাড়া ভারত ও চীনের শিক্ষার্থীরাও এই সুবিধা পাবেন আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত। কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে, এই তালিকায় বাংলাদেশকে রাখা হয়নি।
এদিকে ইমএমজিএস ও ইউসিআই ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটগুলোর দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের ডিপেন্ডেন্ট হিসেবে তাদের স্বামী/স্ত্রী/সন্তান একই সময়ের জন্য ‘ডিপেন্ডেন্ট গ্র্যাজুয়েট পাস’-এর মাধ্যমে একাধিকবার মালয়েশিয়ায় আসা ও যাওয়ার সুবিধাযুক্ত মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।
শিক্ষাজীবন শেষে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের এবং মালয়েশিয়ায় আরও এক বছর থাকার এই সুযোগ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন, ইউনিভার্সিটিগুলোর প্রফেসর, লেকচারার ও শিক্ষার্থীরা।