ইরান ও দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত থেমে গেলেও শত্রুতার আগুন এখনও জ্বলছে। এই যুদ্ধে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে একাধিকবার হামলা চালালেও তেহরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। ক্ষতিগ্রস্ত পরিকাঠামো পুনর্গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে তেহরান এখন আরও দৃঢ়ভাবে তার পরমাণু কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে হুমকির ভাষাও আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছে। তবে এসবের তোয়াক্কা করছে না ইরান। বরং এসবকেই আত্মরক্ষার আরেকটি সুযোগ হিসেবে দেখছে দেশটি। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী—আইআরজিসি।
আইআরজিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইরানের সার্বভৌমত্বে আবারও আঘাত এলে তার জবাব হবে এমন যা শত্রুদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলায় নিহত কয়েকজন আইআরজিসি কমান্ডারের শাহাদতের চল্লিশ দিন পূর্তিতে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।
আইআরজিসি সতর্ক করে বলেছে, যদি ইরান আবার আক্রান্ত হয়, তাহলে তার প্রতিশোধ হবে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ-৩’–এর চেয়েও ভয়াবহ। ফোর্দুসহ ইরানের অন্যান্য পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোর সংস্কার কাজ শুরু করেছে ইরান। হামলা করে ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরানো সম্ভব নয় বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছে তেহরান।
ভবিষ্যতে আবারও হামলা হতে পারে এমন হুঁশিয়ারি বারবার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। জবাবে আইআরজিসি বলেছে, “আমরা যেকোনো সময় এবং যেকোনো স্থানে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্রদের আগ্রাসনের ভয়ঙ্কর জবাব দিতে প্রস্তুত।”
সম্প্রতি যুদ্ধে ইসরায়েলের বিমান হামলার জবাবে দখলদারদের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও এসব হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। ক্ষেপণাস্ত্রের তাণ্ডবে ইসরায়েলিদের অহংকার ধুলোয় মিশে যায়। লক্ষাধিক ইসরায়েলি ঘরবাড়ি ছেড়ে বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিশোধে কাতারে থাকা তাদের সামরিক ঘাঁটিতেও পাল্টা হামলা চালায় ইরান। প্রতিরোধের তীব্রতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য হয়। সেই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আইআরজিসি জানায়, ইরান এখন অপরাধী ইসরায়েল ও মার্কিন ‘গ্যাং’–এর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে অটল রয়েছে।
তারা আরও জানায়, শহিদদের রক্তে রঞ্জিত ইরান আজ একটি অপ্রতিরোধ্য বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যেকোনো শত্রুর পতন ঘটাতে দেশটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত।