মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম জানিয়েছেন, গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে এমন কয়েকজন রয়েছেন, যাদের প্রত্যেকের চিকিৎসায় সরকারকে ১২ কোটি টাকা করে ব্যয় করতে হয়েছে।
বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘কেমন আছে জুলাই ছাত্র-শ্রমিক গণ-অভ্যুত্থানে নিহত গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবার এবং আহত শ্রমিকেরা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
সভাটির আয়োজন করে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। এর আগে ভার্চুয়ালি সভার উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
ফারুক-ই আজম বলেন, সরকার ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে আহত ব্যক্তিরা প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। তারা এককালীন অনুদানও পেয়েছেন। আহতদের জন্য আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে, যা সরকারের সব হাসপাতালে প্রযোজ্য হবে।
এই উদ্দেশ্যে তাদের একটি হেলথ কার্ড দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেছে এবং দেশের সব বিশেষায়িত হাসপাতালে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যাদের দেশে চিকিৎসা যথেষ্ট মনে হয়নি, তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫ জনকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া ও তুরস্কে পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে ৩৪ জন এখনো থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, যাদের প্রত্যেকের সঙ্গে পরিবারের একজন সদস্যও আছেন।
তিনি আরও জানান, কারা বিদেশে চিকিৎসা পাবেন বা কার কী ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করে বাংলাদেশের খ্যাতনামা সরকারি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ড। এই বোর্ডই পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তাও নির্ণয় করে। পাশাপাশি সরকার একটি বৃহৎ পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার আওতায় আহতদের পছন্দ অনুযায়ী পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, যাদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নেই, তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের দক্ষতা ও চাহিদা অনুযায়ী চাকরির সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, সরকার পরিষ্কার করেছে—জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান যেহেতু কোটাবিরোধী ছিল, তাই যোদ্ধাদের জন্য আলাদা কোনো কোটা বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে কেউ যেন বেকার না থাকেন এবং সকলে যেন স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, জুলাই যোদ্ধাদের জন্য একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হবে। যেখানে নিয়োজিত কর্মকর্তারা আহত ও নিহতদের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করবেন।
তিনি আরো বলেন, সরকার এ ঘটনাকে ‘গণ-অভ্যুত্থান’ হিসেবে অভিহিত করেছে। এর নামকরণ কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী যেমন ছাত্র বা শ্রমিকদের নামে করা হয়নি বরং এটি জনগণের সবার অংশগ্রহণে সংঘটিত হয়েছে। সরকার এ ত্যাগের মহত্ত্বকে তুলে ধরতে চায় কারণ এটি জাতির স্পিরিটের সঙ্গে জড়িত। এ আত্মত্যাগ যেন যুগ যুগ ধরে আগামী প্রজন্মকে একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর রাষ্ট্র গঠনে অনুপ্রাণিত করে।
ফারুক-ই আজম বলেন, এই গণঅভ্যুত্থান একটি নতুন রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করেছে। যেখানে দেশের সব রাজনীতিবিদ এখন ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য এক টেবিলে বসে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। পুরো রাষ্ট্রের সমস্ত সম্পদ দিয়েও এই আহত ও শহীদদের ঋণ পরিশোধ করা যাবে না। তবে তাদের পরিবার বংশ পরম্পরায় তাদের ত্যাগের এই গৌরব বহন করে নিয়ে যেতে পারবে, যা অবিস্মরণীয় থাকবে।
তিনি বলেন, লক্ষ্য হলো রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং শ্রমিক ব্যবস্থাপনার সব অসঙ্গতি ও অন্যায় দূর করে একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ দেশ। অথচ অব্যবস্থাপনার কারণে বর্তমানে দরিদ্র অবস্থায় আছে। মন-মানসিকতার পরিবর্তন হলে এটি একটি ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আবেদ রেজা, স্কপের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের হাওলাদার, ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার প্রমুখ।