ভারতের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের যে হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাকে ‘অন্যায্য’ এবং ‘অযৌক্তিক’ বলে আখ্যায়িত করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত থাকবে।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই রাশিয়ার ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU)। তেল, গ্যাস, কয়লা, সার, যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে বহু পণ্যে নিষেধাজ্ঞা চলমান।
তবে ভারতের দাবি, এসব নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ নিজেরাই রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানি করছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, “২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬ হাজার ৭৫০ কোটি ইউরো। ২০২৩ সালেও তা ছিল ১ হাজার ৭২০ কোটি ইউরোর বেশি। অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার বাৎসরিক বাণিজ্যের পরিমাণ তার তুলনায় অনেক কম।”
তারা আরও জানায়, “ইউরোপ শুধু জ্বালানি নয়, সার, খনির যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য, লোহা, ইস্পাত, মেশিনারি এবং পরিবহন উপকরণ আমদানিতেও রাশিয়ার ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। নিষেধাজ্ঞা দিয়েও সেই নির্ভরশীলতা কমানো যায়নি।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের কথিত ‘দ্বিচারিতা’ নিয়ে বলে, “রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র নিজেই রাশিয়া থেকে হেক্সাফ্লোরাইড, পাল্লাডিয়াম, সার এবং রাসায়নিক পণ্য আমদানি করছে। এগুলো মূলত তাদের পারমাণবিক খাত এবং বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।”
এই প্রেক্ষাপটে ভারত প্রশ্ন তোলে—“যখন যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করছে, তখন ভারতের ওপর এই ধরনের চাপ দেওয়া সম্পূর্ণ অন্যায্য এবং অযৌক্তিক। বরং যুদ্ধের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রই চেয়েছিল ভারত যেন রাশিয়া থেকে তেল কিনে জ্বালানি বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, “ভারত তার অভ্যন্তরীণ জ্বালানি বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং জনগণকে ন্যায্য মূল্যে তেল সরবরাহ করাকে জাতীয় স্বার্থ মনে করে। এই স্বার্থ রক্ষায় ভারত প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।”
উল্লেখ্য, এরইমধ্যে ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫% রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছেন, যা কার্যকর হবে ৭ আগস্ট থেকে।
গত সোমবার রাতে ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে ইউক্রেনের মানুষের মৃত্যু নিয়ে ভারত কোনো উদ্বেগ দেখাচ্ছে না, বরং সস্তায় রুশ তেল কিনে চলেছে। তাই ভারতের পণ্যে আরও বেশি শুল্ক আরোপ করবেন বলে হুমকি দেন তিনি।
ট্রাম্পের সেই বার্তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের পক্ষ থেকে এই তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে।