ইসরায়েলবিরোধী মন্তব্য ও গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন দেওয়ার জেরে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ফ্রানচেস্কা আলবানেজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, গাজার যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার কারণেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বুধবার এ ঘোষণা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, আলবানেজ “যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যুদ্ধ চালাচ্ছেন।”
ফ্রানচেস্কা আলবানেজ জাতিসংঘের অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জোরালো কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
তবে আলবানেজ এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি এখন রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিতে ব্যস্ত—গণহত্যা থামানো, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা এবং লাভবানদের জবাবদিহির আওতায় আনা।
আল জাজিরাকে পাঠানো বার্তায় তিনি লেখেন, “মাফিয়া-স্টাইল ভয়ভীতি নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। ব্যস্ত আছি—রাষ্ট্রগুলোকে মনে করিয়ে দিচ্ছি, গণহত্যা থামাও, শাস্তি দাও এবং যারা এসব থেকে লাভবান হচ্ছে, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনো।”
একইদিন সামাজিক মাধ্যমে তিনি লেখেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আইসিসির ওয়ারেন্টভুক্ত হলেও ইউরোপের আকাশসীমা ব্যবহার করছেন—এটি অগ্রহণযোগ্য।
তিনি বলেন, “ইতালি, ফ্রান্স ও গ্রিসের নাগরিকদের জানা উচিত, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারী প্রতিটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ সবার জন্য হুমকি।”
আইসিসি ইতিমধ্যে নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্তকে গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত করেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, তারা ফিলিস্তিনিদের খাদ্য, পানি ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত করেছেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফেব্রুয়ারিতে একটি নির্বাহী আদেশে ঘোষণা দেন, যারা আইসিসিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এরপর গত মাসে চারজন আইসিসি বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
রুবিও দাবি করেন, আলবানেজ “ইহুদিবিদ্বেষী” এবং নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির ওয়ারেন্ট জারির কোনো বৈধতা নেই। তিনি বলেন, আলবানেজের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন মার্কিন ও আন্তর্জাতিক বেশ কিছু কোম্পানির নাম প্রকাশ করেছে যারা গাজায় ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে।
এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ এবং তাদের ও পরিবারের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে।
এদিকে মার্কিন থিংক ট্যাংক ‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসি’র প্রধান ন্যান্সি ওকাইল বলেন, “জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞের ওপর নিষেধাজ্ঞা ভয়ংকর ও কর্তৃত্ববাদী আচরণ। যুক্তরাষ্ট্র যেন স্বৈরশাসকদের মতো আচরণ করছে।”
প্রসঙ্গত, গত ২১ মাসে গাজায় ইসরায়েলের মার্কিন-সমর্থিত সামরিক অভিযানে পুরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এতে অন্তত ৫৭ হাজার ৫৭৫ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
পলিটিক্স/মি