দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও অবরোধের পর অবশেষে গাজার শিশুরা আবারও স্কুলে ফিরছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ (UNRWA) জানিয়েছে, শনিবার থেকে প্রায় ৩ লাখ শিক্ষার্থী গাজার বিভিন্ন স্কুলে ক্লাসে যোগ দিয়েছে।
তবে, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে এখনো পর্যন্ত গাজায় পর্যাপ্ত সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও মানবিক সংকট কাটেনি।
ইউএনআরডব্লিউএ’র মিডিয়া উপদেষ্টা আদনান আবু হাসনা জানান, সংস্থাটি প্রায় দশ হাজার শিক্ষার্থীকে সরাসরি ক্লাসে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি বাকি শিক্ষার্থীদের জন্য দূরশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এই উদ্যোগে অংশ নিচ্ছেন প্রায় আট হাজার শিক্ষক।
তিনি বলেন, “দুই বছরের বিরতির পর শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরা বিলম্বিত করা যাবে না। যুদ্ধের আগেও গাজা করোনার কারণে স্থবির ছিল, এরপর ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসন পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দেয়।”
গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১৭২টি সরকারি স্কুল সম্পূর্ণ ধ্বংস, ১১৮টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত এবং ১০০টিরও বেশি ইউএনআরডব্লিউএ স্কুলে সরাসরি আক্রমণ হয়েছে।
এছাড়া, ১৭ হাজার ৭১১ শিক্ষার্থী নিহত, ২৫ হাজার ৮৯৭ জন আহত এবং ৭৬৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।
আবু হাসনা আরও জানান, ইউএনআরডব্লিউএ গাজার ২২টি কেন্দ্রীয় ক্লিনিক পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করেছে এবং খাদ্য বিতরণ কার্যক্রমও অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু, ইসরায়েলি সীমান্ত দিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যেমন ওষুধ, কম্বল, আশ্রয় সামগ্রী, শীতের পোশাক প্রবেশ করতে না পারায় মানবিক সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “গাজার ৯৫ শতাংশ মানুষ এখন মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। অনেক বাস্তুচ্যুত পরিবার এখনও খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে।”
ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা আজও টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে—তবুও শিশুদের এই ফিরে আসা এক আশার প্রতীক।
