ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্য অটুট থাকলে দেশে একটি সুষ্ঠু ও সংকটমুক্ত জাতীয় নির্বাচন সম্ভব—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, “নির্বাচন নিজেই কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। আসল চ্যালেঞ্জ হলো—যারা বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়।”
সোমবার (৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নাগরিক যুব ঐক্য ‘আগামী নির্বাচন গুণমানসম্পন্ন ও সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে পতিত ফ্যাসিস্ট চেষ্টা করবেই অস্থিরতা সৃষ্টির। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কী অর্জন করতে পেরেছে। রাতের অন্ধকারে দুই-একটা ঝটিকা মিছিল ছাড়া।এগুলো বাংলাদেশের মানুষ পাত্তা দেয় না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বিতর্ক হবে। কিন্তু আমরা যদি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখি এবং শক্তিতে পরিণত করি—ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো উৎপাত এবং উৎপত্তি হবে না।’
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, একটা প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে গণভোট একই দিনে করলে সুবিধা এবং অসুবিধা কী? আমরা সুবিধার কথা বলেছি।
এই নির্বাচনটা হওয়ার জন্য আর দুই-তিন মাস বাকি আছে। একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা একটা মহাযজ্ঞ। এই একই আয়োজন করতে হবে যদি আলাদাভাবে আরেকটি গণভোটের আয়োজন আমরা করি তার আগে। কারণ একই ব্যালট বক্স, একই পোলিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, ভোট সেন্টার সমস্ত আয়োজন, সমস্ত বাজেট সব কিছুই হবে অথচ ফলাফল একই। নির্বাচনের দিনে যে গণভোটের রায়টা আসবে, সেই ফলাফল যেমন একই বাইন্ডিং হবে পার্লামেন্টের ওপর, আর আগে হলেও একই বাইন্ডিং।কিন্তু নির্বাচন বিলম্বিত করার যেকোনো প্রয়াসকে আমরা এড়াতে পারব, বলেন তিনি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এখন লক্ষ করছি, কেউ কেউ, আমি কোনো দলের নাম নেব না…আবার সেই আগের জায়গায়—আগে গণভোট হতে হবে, কনস্টিটিউশন অর্ডার করতে হবে, এগুলো আমাদের মনে হয় পরিহার করা উচিত। এগুলোই হচ্ছে মূল চ্যালেঞ্জ, নির্বাচনটা চ্যালেঞ্জ না। যারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায় বিভিন্ন কায়দা-কানুনের মধ্য দিয়ে, সেটাই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ।’
তিনি আরো বলেন, ‘গণভোট করা যাবে না এমন কোনো বিধান নেই। সুতরাং সরকার অধ্যাদেশ জারি করে অথবা আরপিওতে সংশোধনী এনে একটি গণভোট পরিচালনা করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা প্রদান করতে পারে এবং নির্বাচন কমিশন সেই গণভোটটা করতে পারবে একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে।’
‘আগে হলেও ফলাফল একই। একটা সুবিধা আছে যে, একই আয়োজন, একই অর্থব্যয় এবং একই লজিস্টিক—একবার ভোট সেন্টারে যাওয়া। তাতেই সুবিধা পাওয়া যাবে’, যোগ করেন তিনি।
একাধিক ব্যালটে ভোট দিতে জনগণ অভ্যস্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখনই তো আমরা তিনটি ব্যালটে ভোট দিতে অভ্যস্ত। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে চেয়ারম্যানের জন্য একটা, মহিলা মেম্বারের জন্য একটা, পুরুষ মেম্বারের জন্য একটা দিচ্ছি না? যদিও সেই নির্বাচনগুলো ফ্রড হয়েছে, কিন্তু দিচ্ছি তো! উপজেলা নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যানের জন্য একটা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের জন্য একটা, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যানের জন্য—আমরা দিচ্ছি তো। সিটি করপোরেশন মেয়রও এ রকম দুই-তিনটা ব্যালট থাকে। সুতরাং আমাদের জনগণ অভ্যস্ত।’
তিনি বলেন, ‘গণভোটের জন্য যে ব্যালটটা হবে, সেই ব্যালটে আমাদের সাধারণ জনগণের বোঝার জন্য নির্বাচন কমিশন প্রচারণা দিতে পারে যে, লাল চিহ্নে টিক দিলে না, সবুজ চিহ্নের মধ্যে টিক দিলে হ্যাঁ, এ রকমও হতে পারে। খুব সিম্পল করা যায়। আর গণভোটের প্রশ্ন তো জনগণের সামনে উন্মুক্তই থাকবে।’
