“রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী গতকাল বুধবার বিকেলে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি পোষ্ট দেন।”
পোষ্টে তিনি বলেন “আমি দেশদ্রোহী নই, আমি রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিরোধিতা করছি। প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা পালংখালী ইউনিয়নে বসবাস করছে—এটা আমাদের সমাজ, নিরাপত্তা ও পরিবেশের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি অবশ্যই এই সমস্যার সমাধানে সোচ্চার থাকব।”
২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকটের সময় লাখো রোহিঙ্গা নাফ নদ পেরিয়ে আশ্রয় নেয় কক্সবাজারের উখিয়ার সীমান্তবর্তী পালংখালী ইউনিয়নে। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে আটটিই অবস্থিত এই ইউনিয়নে। তবে কেবল ক্যাম্পেই নয়—গ্রামের বিভিন্ন বসতবাড়ি ও পাহাড়ি এলাকায়ও গণনার বাইরে থাকা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। রোহিঙ্গা ঢলের শুরু থেকেই পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী এই সংকটের নানা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে আসছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ৫০ হাজার বাসিন্দা রয়েছে। অথচ তার ওপরে অবস্থান করছে আরো লাখ লাখ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের বহুমাত্রিক সমস্যা সমাধানের কাজ করতে গিয়ে আমার নিজ এলাকার বাসিন্দারা সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন।’ গতকাল ফেসবুকে তিনি অপর এক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন, দুই মাস আগে প্রায় ৬০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এনে ক্যাম্পে না নিয়ে স্থানীয়দের ঘরবাড়িতে রাখা হয়েছে।
আরো ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি কারো নাম উল্লেখ না করে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা নূর আহমদ আনোয়ারী বলেছেন, নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়াটা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না, বরং আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করাটাই সবার আগে প্রয়োজন। উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরোয়ার জাহান চৌধুরী বলেছেন, ‘রোহিঙ্গারা এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজ এলাকায় রোহিঙ্গাসংক্রান্ত কোনো না কোনো সমস্যা লেগেই থাকে।’
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটা হচ্ছে বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।
রোহিঙ্গা সংকটের কারণে কক্সবাজারে আর্থ-সামাজিক অবস্থা ক্রমেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। স্থানীয়দের সামাজিক ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় সৃষ্টি হয়েছে নানাবিধ জটিলতা। পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীর ভাষায়, রোহিঙ্গা উপস্থিতির প্রভাবে বাজারব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যা স্থানীয়দের জন্য দৈনন্দিন জীবনযাপনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ।
তিনি মনে করেন, সরকারকে এই সংকটকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবভিত্তিক ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান বের করতে হবে। কারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে স্থানীয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি চুরি, ডাকাতি, মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ জড়িত বলেও তিনি অভিযোগ করেন।